এক দিন আগেও কুসুম বেগম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখেই ছিলেন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ায় তাঁর জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তাই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের পাকা সড়কের ওপর।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থান নতুন করে ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার রানীমোড়া গ্রামের কুসুম বেগমের মতো উপজেলার শতাধিক পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। তাঁদের কারও বাড়িতে কোমর আবার কারও বাড়িতে বুকসমান পানি। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্যাকবলিত অনেকে বাড়ি ছেড়ে চা-বাগানের উঁচু টিলায় আশ্রয় নিয়েছে।
গতকাল মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর, সাগরনাল, গোয়ালবাড়ী ও ফুলতলা ইউনিয়নের আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামে জুড়ী নদীর দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে।
পানি ঠেলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছিলেন গ্রামের বাসিন্দা কুটিনা বেগম। পথে দেখা হলে তিনি বললেন, ‘বান্ধর (বাঁধ) কিনারেই বাড়ি। পানিতে সবই ভাসাই নিছে। অখন যাইতাম কই।’
পানিতে সাগরনাল ইউনিয়নের কাপনাপাহাড় চা-বাগানের বাংলা টিলা, খাসকিত্তা, বীরগোয়ালী, ভূঁইয়া টিলা ও পুরান লাইন এলাকা গতকাল সকালে তলিয়ে গেছে। বাগানের চা-কারখানায় আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু শ্রমিক পরিবার। বাগানের ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ২০০-২৫০ চা-শ্রমিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগানের প্রায় দুই লাখ চারাগাছ নষ্ট হয়ে গেছে।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আজির উদ্দিন আহমদ বলেন, গত বুধবার গভীর রাতে তাঁদের এলাকায় জুড়ী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় পশ্চিম শিলুয়াসহ পূর্ব শিলুয়া, এড়ালিগুল ও দেবেরকোনা গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এসব এলাকার বেশ কিছু লোক আশপাশের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে জায়ফরনগর ইউনিয়নের মনতৈল ও গুচ্ছগ্রামে উঁচু টিলা ধসে পড়ায় স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গুলশান আরা চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা তাঁরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান বলেন, গৌরীপুর ও গুচ্ছগ্রাম এলাকায় দুর্গত মানুষকে কিছু শুকনো খাবার, মোমবাতি ও দেশলাই দেওয়া হয়েছে। ইউএনও আরও বলেন, গুচ্ছগ্রাম ও মনতৈল এলাকায় টিলা ধস দেখা দেওয়ায় সেখানকার লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে মাইকিং করাতে বলেছেন।