জলাবদ্ধতার কারণে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর অঞ্চলে চলতি মৌসুমে সাড়ে ছয় হাজার একর জমিতে আমন ধানের চাষ করা যায়নি। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, কাশিমপুর পাম্প হাউসের মাধ্যমে হাওর থেকে পানিনিষ্কাশন না
করতে পারায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজনগর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর এলাকায় ৬ হাজার ৯১৬ একর পর্যন্ত জমিতে আমন ধান চাষের রেকর্ড আছে। কিন্তু এ বছর কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে মাত্র ২৮৫ একর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ৬ হাজার ৬৩১ একর জমিতে আমন ধানের চাষ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকেরা বলেন, কাউয়াদীঘি হাওরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক এ মৌসুমে আমন ধানের আবাদ করতে পারেননি। চারা রোপণের মৌসুম চলে গেলেও এখনো অনেক জমিতে পানি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা। ইউনিয়নের অন্তেহরি, আবদুল্লাহপুর, সাদাপুরসহ বেশির ভাগ গ্রামের কৃষকই আমন ধান চাষ করতে পারেননি।
এ ছাড়া পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ, কুবঝাড়, কানিকিয়ারিসহ কেওলা ও ধুলিজুরা; উত্তরভাগ ইউনিয়নের রামপুর ও সুনামপুর; মুন্সিবাজার ইউনিয়নের পশ্চিমাঞ্চলের মেদেনীমহল, জামুরা, সোনাটিকি ও মিয়ারকান্দি; মনসুরনগর ইউনিয়নের তারাচং, বানারাইসহ আরও অনেক গ্রামে এমন অবস্থা। গত বছরও এ এলাকায় কৃষকেরা আমন ধান চাষ করতে পারেননি।
পাঁচগাঁও ইউনিয়নের রক্তা গ্রামের টিপু সুলতান গতকাল সোমবার বলেন, ‘আমরা তো আমন ধান চাষ করতেই পারিনি। এখনো বন্যার মতো পানি। বোরো ধানও করতে পারব কি না, এ নিয়ে সন্দেহ আছে।’
ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ বলেন, কৃষকেরা আমন ধানের চাষ করতে পারেননি। এখনো অনেক পানি রয়ে গেছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে আরও কম পানি থাকে। পানি যদি না কমে, তাহলে বোরো ধানের চাষও ব্যাহত হবে।
কৃষকেরা বলেন, মনু নদ প্রকল্প এলাকার কাউয়াদীঘি হাওরের কাশিমপুর পাম্প হাউস দিয়ে হাওরের পানি সময়মতো নিষ্কাশন করা হচ্ছে না। কারণ, পাম্পগুলো প্রায় ৩৫ বছরের পুরোনো। আর পানি অনেক বেশি। যে কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন ও ফসল রক্ষার দাবিতে ‘হাওর বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও’ স্লোগানে মনু প্রকল্প ও হাওর রক্ষা সমন্বয় পরিষদ আন্দোলন করছে। পরিষদ গত ২৭ আগস্ট রাজনগরের কাশিমপুর এলাকায় কৃষক সমাবেশ করে। তাঁরা গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা হচ্ছে। পাম্প হাউস দিয়ে পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাম্প হাউসের পুরোনো পাম্পগুলো পরিবর্তন করে নতুন পাম্প বসানো হবে। এতে জলাবদ্ধতা কাটানো যাবে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আরও একটি নতুন পাম্প হাউস স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হবে।