Thank you for trying Sticky AMP!!

টিকা আনার উদ্যোগ নিচ্ছে দূতাবাসগুলো

করোনাভাইরাসের টিকা

রাশিয়ার সরকার বাংলাদেশে অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের করোনার টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকার রুশ দূতাবাস এ বিষয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করলে কোনো টিকা আনতে বাধা নেই।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও একই ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে ওই দুই দূতাবাস–সংশ্লিষ্ট সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি কিছু বড় প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মীদের দেওয়ার জন্য টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

দেশে যেকোনো টিকা বা ওষুধ আনার অনুমতি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রুশ দূতাবাসের টিকা আনার একটি আবেদন আমাদের দপ্তরে এসেছে। আইন ও বিধিবিধান মানলে আমরা অনাপত্তি সনদ দিয়ে দেব।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দূতাবাসে কর্মরত রুশ কর্মকর্তা ও কর্মী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত রুশ নাগরিকদের দেওয়ার জন্য স্পুতনিক-ভি টিকা আনতে চায়। টিকাটি উদ্ভাবন করেছেন রুশ বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সাধারণত সেই ওষুধ বা টিকার অনুমোদন দেয়। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন থাকলেও সেই টিকা সহজে অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে এখন পর্যন্ত রুশ বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা যুক্তরাজ্য–যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পায়নি। অবশ্য টিকাটি রাশিয়া, বেলারুশ ছাড়াও আরও একাধিক দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে। টিকাটি কীভাবে এ দেশে অনুমোদন পাবে, তা স্পষ্ট নয়।

বেসরকারিভাবে টিকা আনার নীতিমালা তৈরি করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খুব শিগগির তা চূড়ান্ত করা হবে।
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজার মানুষ কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার রুশ নাগরিক, প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি এবং বাকিরা ভারতীয়। রুশ সরকার শুধু তাদের নাগরিকদের করোনার টিকা দিতে চায়, নাকি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত সবাইকে দিতে চায়, তা সরকারের কাছে স্পষ্ট নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পদস্থ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, দুটি বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্বেগ আছে। প্রথমত টিকা ব্যবস্থাপনা কী হবে, তা সরকারকে জানাতে হবে। অর্থাৎ কোথায় টিকা রাখা হবে, ঠিক তাপমাত্রায় টিকা রাখা হচ্ছে কি না, কারা টিকা দেবে—এ বিষয়গুলো সরকারকে জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত টিকা দেওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, তা–ও অধিদপ্তরের কাছে স্পষ্ট করতে হবে।

এদিকে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ওই দূতাবাসে কর্মরত সব মানুষকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কবে সেই টিকা আসবে, কীভাবে আসবে, কীভাবে দেওয়া হবে, তা ওই কর্মকর্তার কাছে পরিষ্কার নয়। তবে তিনি বলেছেন, টিকা দেওয়ার মাধ্যমে দূতাবাস খোলার কাজ দ্রুত করতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার। প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন মার্কিন দূতাবাস–সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।

দূতাবাস ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মীদের জন্য টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। টিকা আনতে চেয়ে ব্র্যাক ইতিমধ্যে সরকারের কাছে আবেদনও করেছে। সরকার গতকাল পর্যন্ত শুধু অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আনার অনুমতি দিয়েছে। ভারত থেকে এই টিকা আনবে বেক্সিমকো ফার্মা।

বাংলাদেশে বেশ কয়েক হাজার চীনা নাগরিক বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে কাজ করছেন। চীনও তাদের নাগরিকদের টিকা দিতে চায় কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে চীনের সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একাধিক করোনার টিকা উদ্ভাবন করেছে এবং সেসব টিকা চীনের বাইরে বেশ কয়েকটি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দূতাবাস ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মীদের জন্য টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। টিকা আনতে চেয়ে ব্র্যাক ইতিমধ্যে সরকারের কাছে আবেদনও করেছে। সরকার গতকাল পর্যন্ত শুধু অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আনার অনুমতি দিয়েছে। ভারত থেকে এই টিকা আনবে বেক্সিমকো ফার্মা। এ মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে ৫০ লাখ টিকার প্রথম চালান আসার কথা। এই উৎস থেকে তিন কোটি টিকা এনে দেড় কোটি মানুষকে দেবে সরকার। এই টিকা আনতে সরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকোর মধ্যে চুক্তি আছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বিভিন্ন দূতাবাস, বড় এনজিও, বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য টিকা আনতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি কী হবে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারিভাবে টিকা আনার নীতিমালা তৈরি করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খুব শিগগির তা চূড়ান্ত করা হবে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রুশ দূতাবাসের টিকা আনার একটি আবেদন আমাদের দপ্তরে এসেছে। আইন ও বিধিবিধান মানলে আমরা অনাপত্তি সনদ দিয়ে দেব।
মো. সালাউদ্দীন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক

নীতিমালার মধ্যে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া, দামসহ বিভিন্ন বিষয়ও থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বেসরকারিভাবে টিকা আনার বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশের বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শর্ত সাপেক্ষে টিকা আনতে পারবে। তবে এর আগে এই টিকা আমদানি এবং তার প্রয়োগ কীভাবে হবে, তা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করবে সরকার। সরকারিভাবে টিকা প্রদান শুরু করার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিকা দিতে পারবে।