ঢাকা উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ড উত্তরা মডেল টাউন

দুঃখ তার ভাঙাচোরা রাস্তা

উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের বেহাল দশা। রাস্তাটির বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা। পয়োনিষ্কাশনের লাইন ভেঙে যাওয়ায় গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে কিছু স্থানে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা l ছবি: আশরাফুল আলম
উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের বেহাল দশা। রাস্তাটির বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা। পয়োনিষ্কাশনের লাইন ভেঙে যাওয়ায় গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে কিছু স্থানে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা l ছবি: আশরাফুল আলম

উত্তরা মডেল টাউন। নাম অনুযায়ী রাজধানীর এই অংশটির আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু উত্তরার ১৪টি সেক্টরের প্রায় প্রতিটির ভেতরের রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। সিটি করপোরেশনের কাছে ধরনা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রাস্তার কথাই ধরা যাক। একেবারে ব্যস্ত এই রাস্তাটির মাঝখানে বড় গর্তটি মৃত্যুফাঁদ হয়ে আছে প্রায় ছয় মাস ধরে। নর্দমার ওপরে সিমেন্টের তৈরি বড় ঢাকনা ভেঙে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি। বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
এই গর্তের কথা এলাকাবাসী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। অগত্যা এলাকার লোকজন একটি বাঁশ খাড়া করে রেখেছেন, যা বিপৎসংকেত হিসেবে কাজ করছে। তবে রাতে এই বিপৎসংকেতও দেখা যায় না পর্যাপ্ত আলোর অভাবে। একই অবস্থা ৯ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে। রোডটির মুখে একটি কালভার্ট প্রায় এক বছর ধরে ভাঙা।
উত্তরা মডেল টাউনের ১৪টি সেক্টর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। গত দুই দিন এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকার ভেতরের বেশির ভাগ রাস্তাই খানাখন্দে ভরা। এসব রাস্তায় ঝাঁকুনি খেতে খেতে যানবাহন চলাচল করে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা ৮ ও ৯ নম্বর সেক্টরের রাস্তাগুলোর। ৮ নম্বর সেক্টরের পুরোটায়ই সরকারি কলোনি। এই সেক্টরের পুলিশ স্টাফ কোয়ার্টার রোড এবং সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের সামনের রাস্তা দুটিতে যানবাহন চলার জো নেই। ৯ নম্বর সেক্টরের ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭ ও ৮ নম্বর সড়ক এতটাই ভাঙাচোরা যে রিকশা বা গাড়ি ঝাঁকুনি ছাড়া টানা এক মিনিটও চলতে পারে না।
৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই এই রাস্তায় পানি জমে যায়। এই সেক্টরের ১, ৩, ৪, ৬, ১৮, ১৯, ২৭, ২৯, ৩৬ এবং ৭/এ, ৭/সি, ১৩/এ নম্বর রাস্তাও খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে এসব রাস্তায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে সমস্যাগুলোর সহজে সমাধান হয় না, এটাই বড় সমস্যা।
এই সেক্টরের লাগোয়া ৭ নম্বর সেক্টরের লেক ড্রাইভ রোড, ১৩/বি ও ৩ নম্বর রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে খারাপ ছিল। সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই তিনটি রাস্তার মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ঢিমেতেতালায় কাজ চলায় এলাকাবাসীকে এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. নাসিরউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট উত্তরাবাসীর দুঃখ হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে ঠিক করে; কিন্তু তা ভালোভাবে করা হয় না। ফলে কয়েক দিন পরে আবার আগের অবস্থাতেই ফিরে যায়।
৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর রাস্তার পুরোটাই দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা। এ ছাড়া ১১, ৬, ৯, ১২ ও ৪ নম্বর রাস্তারও একই দশা।
৫ নম্বর সেক্টরের ২, ৩ ও ৫/এ রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরা। এই সেক্টরের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বললেন, প্রতিদিন রিকশায় তিনি ১০ নম্বর সেক্টরে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। ঝাঁকুনি খেতে খেতে তাঁর কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে।
তবে ১০ নম্বর সেক্টরের রাস্তাগুলোর চিত্র তুলনামূলক কিছুটা ভালো।
১১ নম্বর সেক্টরের পশ্চিম থানা রোড এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাঙা। ধুলাবালুর জন্য এই রাস্তায় চলার উপায় নেই। ৩/এ ও ৪ নম্বর রাস্তারও একই হাল অনেক দিন ধরে। এই সেক্টরের ১৫ নম্বর রাস্তায় ছয় বছর ধরে ইট বসানো দেখছেন এখানকার একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক রুবেল। তাঁর দাবি, এই রাস্তা কখনোই পিচ ঢালাই দেওয়া হয়নি।
১৪ নম্বর সেক্টরের ৮ ও ২০ নম্বর রাস্তা দুটি মাস ছয়েক আগে ওয়াসার পানির সরবরাহ লাইন মেরামতের জন্য কাটা হয়। এরপর এই রাস্তা দুটি আর মেরামত করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক রাখাল চন্দ্র বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাজেট সাপেক্ষে রাস্তাগুলোর মেরামত করি। অনেক সময় মেরামতের পর পর অন্য সংস্থা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। তখন একই রাস্তা একই বছর আবার মেরামত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।’