
ছাত্রদলের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। দিনটি উপলক্ষে আজ সকালে বুয়েট ক্যাম্পাসে সনির স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এ সময় সনি হত্যার দিনটিকে (৮ জুন) ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।
২০০২ সালের ৮ জুন দরপত্র নিয়ে বুয়েট ছাত্রদলের মুকি এবং এসএম হল ছাত্রদলের টগর গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধের মাঝখানে পড়ে নিহত হন বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ১৯৯৯ ব্যাচের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। এ ঘটনার পর সারা দেশে আন্দোলন হয়। সনি হত্যা মামলার রায় হলেও দুই আসামি এখনো পলাতক।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুয়েটের সাবেকুন নাহার সনি হলের সামনে অবস্থিত স্মৃতিফলকে আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় শ্রদ্ধা জানায় সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশন, অভিভাবক পরিষদ, বুয়েট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। এরপর সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সেখানে একটি মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনের শুরুতে সুরা ফাতিহা পাঠ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মানববন্ধনে সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘কোনো বাবা যেন আর কোনো সনিকে না হারায়। আমি এক সনিকে হারিয়ে আমার চোখে হাজারো সনিকে দেখেছি। শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে। জানি তাঁর জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমি হতাশ নই। একদিন দেশে সুদিন আসবে। আমাদের হাজারো বেঁচে থাকা সনিদের জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সনির বড় ভাই মামুন মোল্লা, চাচি মালতী ফারুক ও খালা রোকেয়া খানম, সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ নিয়ামুল করিম, নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা খবির উদ্দীন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মানববন্ধনে সরকারের কছে ছয় দফা দাবি জনানো হয়। এগুলো হচ্ছে—শিক্ষাঙ্গনে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করা; রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা; অঙ্গসংগঠনের পরিচয়ে ও ছাত্রসংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও বখাটেপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া; শিক্ষার্থীদের সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেওয়া; শিক্ষাঙ্গনে মেয়েদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং স্বাধীনতার পর শিক্ষাঙ্গনে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া।
সনি হত্যার ২০ বছর পূর্তিতে বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। জানতে চাইলে বুয়েট জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক (তথ্য) শফিউর রহমানও এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি।