
‘বেশি টাকা আয় করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দুই লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। বিদেশের মাটিতে ৩৬ মাস কঠোর পরিশ্রম করেও সে আশা পূরণ হয়নি। কেবল খেটে মরেছি। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরে এসে আবার শুরু করি বাপ-দাদার পেশা চাষাবাদ। ছয় বছর পর এবার ধান চাষের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে পেঁপে চাষ করে দেখি ভাগ্য আমার ঘরেই ধরা দিয়েছে।’
কথাগুলো বলছিলেন ছয় বছর আগে ভাগ্য বিড়ম্বিত হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসা সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের মোহাম্মদ ইসমাইল (৪৯)।
তিন মেয়ের জনক ইসমাইল দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছেন, গ্রামের অনেকেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে দেশে বাবার সঙ্গে চাষাবাদ করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই বিদেশি উপার্জনে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ২০০৪ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরব। কিন্তু তিন বছর কঠোর পরিশ্রম করেও কাঙ্ক্ষিত আয়ের মুখ দেখেননি তিনি। অবশেষে হতাশ হয়ে দেশে এসে মনোনিবেশ করলেন আগের পেশায়।
পেঁপে চাষের চিন্তা: ইসমাইল বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে আসার পর থেকে বাবার সঙ্গে ধান ও মৌসুমি সবজি চাষ করে মোটামুটিভাবে সংসারের খরচ মেটাচ্ছিলাম। কিন্তু মেয়েসহ সংসারের জন্য সঞ্চয় করার মতো কোনো টাকা হাতে থাকত না। একপর্যায়ে পেঁপের চাহিদা ও দামের কথা ভেবে চলতি বছরের শুরুর দিকে শুরু করি পেঁপে চাষ। সাত-আট মাসের মধ্যেই দেখি ভাগ্য আমার হাতের মুঠোয়।’
ইসমাইল জানান, বছরের শুরুর দিকে ১২ শতাংশ করে দুই খণ্ড জমিতে পেঁপে চাষ করেন তিনি। বীজতলা তৈরি ও চারা কেনাসহ সবমিলিয়ে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। নিজেই খেতের পরিচর্যা করেছেন। পরিচর্যার ব্যাপারে মাঝে-মধ্যে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় পাইকারি ও খুচরা দামে পেঁপে বেচে লাখ টাকা আয় করেছেন। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে না পড়লে এই খেত থেকেই আরও দুই-আড়াই বছরে দুই লাখ টাকার বেশি আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বর্তমানে দুটো খেতই কাঁচা-পাকা পেঁপেতে ভরা। প্রতিটি গাছে ১৮-২০টি করে পেঁপে ধরেছে। ইসমাইল নিজেই খেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা এসে পেঁপে নিয়ে যান। আবার আমি নিজে আশপাশের বাজারে নিয়ে খুচরা হিসেবেও বিক্রি করি। ইসমাইলের মতো পেঁপে চাষ করে লাভবান হয়েছেন উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ছোট হাতিয়া এলাকার নুরুল আলম, মহরম আলী, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুব উদ্দীনসহ অনেকে। তাঁরা
জানান, মৌসুমের শুরুর দিকে দাম বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে পাকা পেঁপে বিক্রিতে লাভ বেশি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘পেঁপে চাষের ব্যাপারে ইসমাইলসহ অন্যদের আগ্রহ উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা তাঁদের সহজ চাষপদ্ধতি জানিয়ে দিই। প্রতিদিন পেঁপের খেতে সময় দিতে হয়।’ তিনি জানান, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে ৪১৬টি চারা লাগানো যায়। ৪০ দিনে ফুল এবং ৬০-৬৫ দিনে ফল পাওয়া যায়। একটি গাছে বছরে পাওয়া যায় ৬০-৭০ কেজি পেঁপে।