মোটরসাইকেল কেনার আগে জানা জরুরি

মোটরসাইকেল কেনার আগে কিছু জিনিস চিন্তাভাবনা করে নিতে হবে।
ছবি: সংগৃহীত

তীব্র জ্যাম পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেলের বিকল্প নেই। যাতায়াতে নির্ভাবনায় থাকতে তাই এখন অনেকেই কিনছেন মোটরসাইকেল। কেউ কেউ নতুন পথসঙ্গী বানাতে চাচ্ছেন স্কুটিকে। নতুন যেকোনো কিছু কিনতে হলে ভাবনার শেষ নেই। কেমন গুণসম্পন্ন জিনিস কিনব, কোথা থেকে কিনব, বাজেটের ভাবনাও থাকে। প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল কিনতে গেলে চিন্তা করতে হয় অনেক কিছু। সেসব নিয়েই বলেছেন টিভিএস অটো বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার (সার্ভিস) অমিত কান্তি পাল। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ছোট জিনিস কিনতে গেলেও চিন্তা করি, কোন মডেলের কিনব। মোটরসাইকেল তো আমাদের রাস্তায় চলার সঙ্গী। তাই রাস্তার নিরাপত্তা, টেকসই, মাইলেজ (জ্বালানি ব্যয়) কেমন—মোটরসাইকেল কেনার আগে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হয়।’

প্রথমেই বাজেট–ভাবনা

মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে সবার আগে বাজেট ঠিক করতে হবে। আপনার বাজেট যদি হয় লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা,Ñতাহলে এর মধ্যে সেরা মোটরসাইকেলটি খুঁজে বের করতে হবে। প্রথমেই যেসব বাইক পছন্দ নয়, সেগুলো বাদ দিন। বাইকের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, কোনো রং, দেখতে কেমন, পারদর্শিতা ইত্যাদির ভিত্তিতে অনেকগুলো বাদ পড়ে যাবে। আর বাজেট যদি হয় আড়াই লাখ টাকার মতো, তাহলে ভাবনার বিষয়টা একটু ভিন্ন হবে। হয়তো আপনি একটা ‘রেসিং বাইক’ কিনতে চাইছেন। সেটার মানও ভালো হতে হবে। দেখা গেল, বাজেটের ভেতর যে বাইকগুলো আছে, সেগুলোর ৩টি বাদে কেউ ৪ সেকেন্ডের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতি তুলতে পারে না। তাহলে আপনার পছন্দের তালিকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা নেমে যাবে তিনটিতে।
নতুন, নাকি পুরোনো?

আপনার বাজেট ও অন্যান্য চাহিদার ওপর এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে। যদি প্রথমবার নিজের স্কুটার বা মোটরসাইকেল কেনেন, তাহলে পুরোনো স্কুটার বা মোটরসাইকেল কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। একবার চালানো শিখে গেলে ১–২ বছর পর তা বিক্রি করে একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনে নিতে পারবেন।

নিন অভিজ্ঞদের পরামর্শ

যে বাইকটি কিনতে চাচ্ছেন, সেটি সম্পর্কে পরিচিত ব্যবহারকারীদের পরামর্শ ও মতামত নিন। যে বাইকটির প্রতি আপনার আগ্রহ আছে, সেটি কেউ ব্যবহার করলে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিলে বেশি উপকৃত হবেন। পরামর্শ নেবেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবেন নিজে ভেবে।

মাইলেজের দিকে নজর দিতে হবে

যদি মোটরসাইকেল নিয়মিত ব্যবহার করতে চান, যদি ব্যয় সীমিত রাখতে চান, তাহলে মাইলেজের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ, প্রতিদিনের লম্বা দূরত্বের রাস্তার জন্য মাইলেজ অনেক বড় একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকের একটা ধারণা আছে যে মাইলেজ ভালো মানেই বাইক ভালো। এটা কিন্তু একদম ঠিক নয়। মাইলেজের পাশাপাশি মোটরসাইকেলটির অন্যান্য অনুষঙ্গ, বিশেষ করে ইঞ্জিনের দিকে নজর দিতে হবে।

রিসেল ভ্যালু

যদি ঘন ঘন মোটরসাইকেল পরিবর্তন করেন, তাহলে রিসেল ভ্যালু বা পুনর্বিক্রয়মূল্য গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সে ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল কেনার আগে রিসেল ভ্যালুর দিকে নজর দিতে হবে। যে মোটরসাইকেলগুলো কয়েক বছর চালানোর পরও বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়, সেগুলো কিনতে হবে।

অনুমোদিত পরিবেশক

সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে কোম্পানির অনুমোদিত পরিবেশকের কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি কিনুন। তাতে কেনার পর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। অনেক দোকান আছে, যারা হয়তো কিছুটা কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রি করবে কিন্তু বিক্রয়–পরবর্তী কোনো সেবা দেবে না বা মোটরসাইকেলের কোনো সমস্যা হলে দায়িত্ব নেবে না। এ জন্য নতুন মোটরসাইকেল কেনার আগে কোম্পানির পরিবেশকের নামগুলো যাচাই করে নিন।

পরীক্ষামূলক চালানো

ধরুন আপনি কেনার জন্য তিনটি মোটরসাইকেল পছন্দ করেছেন। এবার সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখুন। যদি পরিচিত কারও না থাকে, তাহলে শোরুমে চলে যেতে পারেন। এখন প্রায় সব মোটরসাইকেল কোম্পানিই পরীক্ষামূলক বা টেস্ট রাইডের সুযোগ দিচ্ছে। কেনার আগে অবশ্যই কোন বাইকটি আপনার সঙ্গে মানানসই, সেটা বাস্তবে অভিজ্ঞতা নিন। এভাবে আপনি আপনার শারীরিক কাঠামোর সঙ্গে সবচেয়ে ভালো মানায়, সে রকম মোটরসাইকেল বাছাই করতে পারবেন।

সবশেষে

সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে পছন্দের মোটরসাইকেল কেনা হলো। এরপর নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করাতে ভুলবেন না। নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা জরুরি। নিজের সুরক্ষার জন্য ভালো মানের হেলমেট কিনুন। সে জন্য মোটরসাইকেল কেনার বাজেটে আগেই হেলমেটের দাম ধরে রাখুন। বেশির ভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চালক ও যাত্রীরা মাথায় আঘাত পান। তাই দুর্ঘটনায় পড়লে ভালো মানের ‘ফুলফেস’ হেলমেট আপনার প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে । শুভ হোক আপনার মোটরসাইকেল কেনার যাত্রা।