Thank you for trying Sticky AMP!!

যুদ্ধাপরাধী কায়সারের আপিলের রায় ১৪ জানুয়ারি

মো. কায়সার । ফোকাস বাংলার ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সারের আপিলের রায় আগামী ১৪ জানুয়ারি।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ কায়সারের আপিল মামলায় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ তারিখ ধার্য করে আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে এটি নবম মামলা, যা আপিলে নিষ্পত্তি হচ্ছে।

আদালতে সৈয়দ কায়সারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রাষ্ট্রপক্ষ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

গত ১০ জুলাই এ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডসহ পৃথক অভিযোগে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মুক্তিযুদ্ধকালে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, পাঁচজনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ষড়যন্ত্রসহ কায়সারের বিরুদ্ধে গঠন করা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের দুটিসহ সাতটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বাকি সাতটি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড, একটিতে ১০ বছর, একটিতে সাত বছর ও একটিতে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ায় কারাদণ্ডের সব সাজা মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে।

যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির আদেশ পান কায়সার। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হয় বিচারে। ওই দুই বীরাঙ্গনা নারী এবং ধর্ষণের ফলে বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্যও দেন কায়সারের বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির সাজা বাতিল ও বেকসুর খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেন কায়সার। ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিলের পক্ষে আপিলে মোট ৫৬টি যুক্তি দেখানো হয়।

কায়সারের বিরুদ্ধে ৪৮৪ পৃষ্ঠার ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০ থেকে ৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করতে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ নামে বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে ছিলেন ওই বাহিনীর প্রধান। এমনকি ‘কায়সার বাহিনী’ নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফর্মও ছিল।

কায়সার এ বাহিনীর মাধ্যমে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালায়।

এরশাদ সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী কায়সার ২০১৩ সালের ২১ মে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিচারের প্রায় পুরো সময় তিনি জামিনে ছিলেন।