Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা

স্বাভাবিক জীবন পেলেন রাকেশ

স্কুলে পড়ার সময় মাদকের সঙ্গে পরিচয় রাকেশের। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে নেশায় আসক্ত হন। হাতের কাছে যা যা পাওয়া গেছে, সবকিছু দিয়ে নেশা করেছেন রাকেশ। এক সময় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেওয়া শুরু করেন। মাদকের টাকা জোগাড় করতে কী করেনি তিনি! বাসার জিনিসপত্র চুরি করেছেন, বাবা-মায়ের ব্যাগ থেকে টাকা সরিয়েছেন। ছিনতাই–রাহাজানি পর্যন্ত করেছেন।

ধীরে ধীরে পরিবারের সবার চোখে পড়তে শুরু করল রাকেশের অস্বাভাবিক আচরণ। বাসার সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। একপর্যায়ে কারও বুঝতে বাকি থাকল না যে রাকেশ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। আত্মীয়দের বাসায় গেলে তাঁর মুখের সামনেই তাঁরা বলতেন ঘরের জিনিসপত্র সামলে রাখতে। একটা সময় রাকেশ বুঝতে শুরু করলেন, এই নেশা থেকে তাঁর মুক্তি নেই। তাঁকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর মুখে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে নেশা।

পরিবারের সবাই যখন হতাশ, চোখে শুধুই অন্ধকার। ঠিক তখন একদিন রাকেশের মায়ের চোখ পড়ল প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ছুটির দিনে’র একটি পাতায়। সেটি ছিল মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার বিজ্ঞাপন। ছেলের সুস্থ জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া মায়ের মনে হলো, একবার ওই সভায় যাওয়া উচিত, যদি ছেলের জন্য কোনো পথ পাওয়া যায়। তিনি সেদিন গেলেন ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনের প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভায়।

প্রথম আলো ছাপা কাগজে প্রতিদিন ৫০ লাখ পাঠক

পরামর্শ সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মাদকের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা করলেন। আগত সকলকে বোঝান যে, মাদকাসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। সঠিক চিকিৎসায় যা সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়। শুধু একটু ধৈর্য আর মনে সাহস রাখতে হয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ভালোবাসতে হয়, তার পাশে থাকতে হয়। মায়ের মন একটু একটু করে সাহস পেল। স্বপ্ন দেখলেন তাঁর ছেলে আবার সুস্থ হয়ে যাবে। ওই সভায় ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজালের সঙ্গে তিনি পরিচিত হন। এবার পরের আয়োজনে মা ছেলেকে নিয়ে আসেন। ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল রাকেশকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি আসলেই সুস্থ হতে চান কি না। রাকেশ বললেন সত্যি সত্যি সুস্থ হতে চান, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান, বাঁচতে চান। ব্রাদার রোনাল্ড তাঁকে কথা দেন, তিনি এবং এই সভায় উপস্থিত সবাই তাঁর পাশে আছেন এবং সুস্থ হতে সহায়তা করবেন।

শুরু হয় রাকেশের চিকিৎসা। চিকিৎসার পুরোটা সময় মা ধৈর্য ধরেছেন। ছায়া হয়ে থেকেছেন ছেলের পাশে। চেষ্টা বিফলে যায়নি। রাকেশ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন। প্রমাণিত হলো মাদকাসক্ত হয়েও চিকিৎসা নিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসা যায়। সমাজের একজন হয়ে বেঁচে থাকা যায়। আশপাশের সবাই যারা একসময় রাকেশের বাবা-মা, বোনকে খুঁচিয়ে কথা বলত, তারাই এখন বুকে তুলে নিয়েছে রাকেশকে।

তবে ছেলে সুস্থ হলেও মা আর বেঁচে নেই। গত বছর তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভায় আসতেন। রাকেশ এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। নিজের পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো এটা সবার কাছে খুব স্বাভাবিক বিষয়। এই চিকিৎসার পুরো সময়টা কত কঠিন ছিল, কীভাবে সুস্থ হয়েছি, আমি জানি। আমার পরিবার জানে। মাদকাসক্তি থেকে সুস্থ হয়ে সমাজে ফিরে আসা আমার জন্য অনেক বড় একটা বিষয়।’

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার, প্রথম আলো ট্রাস্ট