
হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারীরা ঈদে পরিবার তো দূরের কথা, নিজের পছন্দের পোশাকটিও কিনতে মার্কেটে যেতে পারেন না। টেলিভিশনে বা পত্রিকায় ঈদের হাল ফ্যাশনের পোশাকের ছবি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাঁদের।
মা-বাবা বা অন্যরা যা কিনে দেন, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। অনেকে বহু প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে কেনাকাটা করেন, তবে ভিড় এড়ানোর জন্য ঈদের আমেজ শুরু হওয়ার অনেক আগেই তাঁরা কেনাকাটা শেষ করতে বাধ্য হন। ফলে ঈদে কোন ফ্যাশনের জামা বা শাড়ি বেশি চলবে, তা বিবেচনা করার সুযোগ থাকে না।
চট্টগ্রাম এবং রাজধানীর একাধিক হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী ঈদ বাজার নিয়ে তাঁদের হতাশা ও আক্ষেপের কথা বলেন। তাঁদের মতে, মার্কেট কর্তৃপক্ষ একটু সদয় হয়ে ছোট র্যাম্প বা ঢালুপথ তৈরি করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তবে মার্কেট কর্তৃপক্ষ বা দোকান মালিক সমিতি র্যাম্প তৈরিসহ টুকটাক উদ্যোগের বিষয়টি ‘অযথা’ ভেবে আর টাকা খরচ করে না। তারা ধরেই নেয়, হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা কেনাকাটা করতে আসবে না।
বি-স্ক্যানের জরিপ: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন বি-স্ক্যান বিভিন্ন স্থাপনার প্রবেশগম্যতা নিয়ে জরিপ, র্যাম্প তৈরিতে সহায়তা, অ্যাডভোকেসিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি সংগঠনের করা এক জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটে ঢোকার মুখেই তিন ধাপ সিঁড়ি। সেখানে কোনো র্যাম্প নেই। করিডরে নানা রকম পণ্যের পসরা, তাই হুইলচেয়ার নিয়ে চলাচল করা যায় না। এ ছাড়া প্রতিটি দোকানই করিডর থেকে ছয় থেকে আট ইঞ্চি ওপরে। এ মার্কেটে নারীদের জন্য আলাদা শৌচাগার থাকলেও তার প্রবেশমুখেই সিঁড়ি। ভেতরে হুইলচেয়ার নিয়ে ঢোকা যায় না। লিফট না থাকায় নিউমার্কেটের দোতলায় যাওয়ার উপায় নেই। জরিপ মতে, চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে র্যাম্প ও টুকটাক সংস্কার করলেই তা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করতে পারবেন।
চট্টগ্রামের সাবরিনা সুলতানা ও তাঁর ছোট বোন তাসনিম সুলতানা দুজনই হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। তাঁরা মাসকিউলার ডিস্ট্রফি নামক ডিস-অর্ডারে ভুগছেন। বি-স্ক্যানের সভাপতি সাবরিনা বলেন, ‘নিজেরা ঈদবাজারে যেতেই পারি না। বারবার সিঁড়ি দিয়ে কে আমাদের ওঠানামা করাবে?’
এই দুই বোনের ঈদের কেনাকাটা বলতে, থ্রি-পিসের কাপড় কিনে দরজির কাছে বানাতে দেওয়া। তবে কোন কাপড় বা থ্রি-পিস কিনবেন, তা পছন্দ করারও সুযোগ ছিল না দুই বোনের। তাঁদের মা কিনে এনেছেন।
সবার গল্প একই রকম: নিগার সুলতানা দুই বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন। সাড়ে তিন বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার জন্য ঢাকায় আসেন। এর আগ পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। সেখানে প্রায় সব মার্কেট ও বিপণিবিতান দোতলায় অবস্থিত। ফলে কখনোই মার্কেটে যাওয়া হয়নি। তবে ঢাকায় যমুনা ফিউচার পার্ক, পিংক সিটিসহ কয়েকটি বিপণিবিতানে যান তিনি।
রাজধানীর রামপুরার আফিয়া আক্তার একটি সংগঠনের সহায়তায় বাসার ভেতরেই গজ কাপড়ের ব্যবসা করছেন। টুকটাক কেনাকাটার জন্য তিনি বোনের সহায়তা নেন। আফিয়া বলেন, ‘দোকানের ভেতরে গেলে দোকানিরা বলে, একটু সাইড দেন। তাড়াতাড়ি করেন। টাকা দিয়ে জিনিস কিনি, তার পরও এমন কথা শুনতে হয়।’
বি-স্ক্যানের জেনারেল সেক্রেটারি সালমা মাহবুব বলেন, ‘আমি মূলত নগরের বসুন্ধরা মার্কেটে কেনাকাটা করতে যাই। তবে এখানে এসে কেনাকাটা করার মতো হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী কজন নারীর সামর্থ্য আছে, তাও এক বড় প্রশ্ন।’