বাংলা একাডেমির আলোচনা অনুষ্ঠান

বৃহৎ শিল্পের পরিবেশবিধ্বংসী রূপ দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়েছে। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ আলোচনা হয়।

এতে মূল বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ও গবেষক বেগম আকতার কামাল। রবীন্দ্রনাথের ‘নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে তাঁর পরিবেশভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন আকতার কামাল।

বেগম আকতার কামাল বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নববর্ষ প্রবন্ধে অনেক জরুরি বিষয় তুলে ধরেছেন, যা কাল ছাপিয়ে কালোত্তর প্রাসঙ্গিকতার অনুভব সঞ্চার করে। এখানে তিনি (রবীন্দ্রনাথ) তাঁর পরিবেশ চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বৃহৎ শিল্পের পরিবেশবিধ্বংসী রূপ দেখে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ ছাড়া ওই প্রবন্ধে তিনি যুদ্ধ, হিংসা ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, যা মানুষের শত্রু, ধরিত্রীর শত্রু।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বেগম আকতার কামাল আরও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের পরিবেশভাবনার আলোকে আমরা এখনো আমাদের সমাজ ও দেশের পরিবেশকে বিশুদ্ধ, নিরাপদ এবং মানুষের বসবাসযোগ্য করে তুলতে পারি। সবশেষে মানবের জয়ই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সব রচনার মূল বক্তব্য।’

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রহমান হাবিব বলেন, ‘নববর্ষ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ উদ্ভিদ ও প্রাণিচিন্তার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কথা মিলিয়েছেন। একই সঙ্গে মানুষের দায়ের চেতনাকে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সেসব প্রসঙ্গে আলোচনা করেন এ আলোচক।

কবি ও লেখক মাহবুব হাসান বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যদি এই সময়ের সভ্যতার সংকট নিয়ে লিখতেন, তবে তাঁর রচনায় এমন আরও অনেক প্রসঙ্গ উঠে আসত, যা তখন অনুপস্থিত ছিল।’

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে বাংলা কবিতার বিশ্বজয় হয়। রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রধান চেতনা অসাম্প্রদায়িকতা ও বিশ্বমানবতা বোধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গান মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা ছিল।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে আলোচনা ও চর্চা অনবরত হচ্ছে। আজকের প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ-প্রসঙ্গকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, রবীন্দ্রনাথ কোনো বিষয়েই নির্দিষ্টতাবাদী নন বরং সর্বতোবাদী। ফলে পরিবেশের প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন শুধু গাছপালা বা জলবায়ুর কথাই আসে না; বরং দার্শনিকভাবে তা আরও বৃহৎ বিষয়কে ধারণ করে। রবীন্দ্রচিন্তায় পরিবেশকে সম্যকভাবে বুঝতে তাঁর এ–সংক্রান্ত প্রবন্ধ থেকে শুরু করে কবিতা-গান-কথাসাহিত্যের মতো সৃজনশীল সৃষ্টির কাছেও আমাদের যেতে হবে।’

আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।