
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে ‘টু গাজা ফ্রম ঢাকা’ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়টারে এই কনসার্টের আয়োজন করে আর্টিস্ট অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড ফ্রন্ট। কনসার্টটি বেলা তিনটায় শুরু হয়ে গভীর রাতে শেষ হয়।
আয়োজকেরা জানান, কনসার্টের টিকিট বিক্রির পুরো টাকা গাজায় যুদ্ধাহত মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে পাঠানো হবে। যে কারণে কনসার্টে অংশ নেওয়া কোনো ব্যান্ড দল ও শিল্পী কেউই পারিশ্রমিক নেননি। পাশাপাশি অনলাইনেও গাজার বাসিন্দাদের জন্য আর্থিক সহায়তা সংগ্রহ করা হয়।
এ ছাড়া কনসার্ট দেখতে যাওয়া মানুষের কাছে স্মারক হিসেবে টি-শার্ট ও গাজার ঐতিহ্য জলপাই গাছের ছবি সংবলিত বিশেষ পোস্টার বিক্রি করেন আয়োজকেরা। ছিল হালকা খাবার বিক্রির স্টল গ্রিন অ্যান্ড পিপার রেস্তোরাঁ ও আকিজ গ্রুপের মোজো স্টল। এসব টি-শার্ট, পোস্টার ও খাবার বিক্রির লাভের টাকাও আর্থিক সহায়তা হিসেবে গাজায় পাঠানো হবে বলে জানান আয়োজকেরা।
সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই কনসার্ট থেকে সব মিলিয়ে ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৩২ টাকা সংগ্রহ হওয়ার কথা জানান আয়োজকেরা। এর মধ্যে আকিজ গ্রুপ মোজোর যে স্টল দিয়েছিল, সেখান থেকে লাভের ৫০ হাজার টাকা গাজাবাসীর সহায়তায় দান করে। অনুদানের অর্থ রেড ক্রিসেন্ট, প্যালেস্টাইন চিলড্রেন রিলিফ ফান্ডের মাধ্যমে গাজার বাসিন্দাদের কাছে পাঠানো হবে।
কনসার্টের শুরুতে গান পরিবেশন করে ব্যান্ড দল হাতিরপুল সেশনস, মুনফ্লাওয়ার প্রজেক্ট, ফিরোজ জং, মরুভূমিসহ শিল্পী মুয়িজ মাহফুজ ও অভিষেক ভট্টাচার্য। এ সময় শিল্পী ও ব্যান্ড দলগুলো বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় গান গেয়ে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ জানান।
কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী। তিনি পঙ্গু, দুই পা হারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ফাদি আবু সালাহকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। পরে একে একে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন শিল্পী আসির আরমান, র্যাপ গানের ব্যান্ড দল ব্ল্যাক জ্যাং, হাইওয়ে ও শিল্পী মাশা ইসলাম।
কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলেন দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় আসা ফিলিস্তিনের দোজা মেহসিন নামের এক নারী। তাঁকে মঞ্চে ডাকা হলে তিনি বলেন, ‘আমার দেশের জন্য, মানুষের জন্য আপনাদের সংহতি দেখে ভালো লাগছে। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই মিলে ফিলিস্তিনকে একদিন স্বাধীন করব।’
এরপরে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন শিল্পী আহমেদ হাসান সানি। তাঁর গাওয়া ‘প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে আমরা যাব না কোথাও’ গানটির সঙ্গে প্রতীকী শিশু সন্তানের কাফনে মোড়ানো লাশ নিয়ে অভিনয় করেন শিল্পী জাকিয়া বারী মম। এর সঙ্গে প্রতিবাদী লেখা ছিল ‘শিশুরা যখন ঘুমায় তখন চুপ থাক, তাদের যখন হত্যা করা হয় তখন না।’
অভিনয় শিল্পী জাকিয়া বারী মম বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য সুন্দর পৃথিবী চাই৷’
পরে ব্যান্ড দল ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ তাদের প্রতিবাদী গান সামাজিক কোষ্ঠকাঠিন্য পরিবেশন করে। ২০১৮ সালে সিরিয়া যুদ্ধে নিহত শিশুদের উৎসর্গ করে লেখা ‘ছোট পাখি’ গানটি পরিবেশন করে ব্যান্ড দল সহজিয়া।
সহজিয়া ব্যান্ডের ভোকালিস্ট রাজীব আহমেদ দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘গাজায় নিহত শিশুদের জন্য এই গান গাইছি। যেটা সিরিয়া যুদ্ধে নিহত শিশুদের জন্য লেখা হয়েছিল। কিন্তু এই গান আমরা আর গাইতে চাই না, আর যেন গাইতে না হয়।’
শেষের দিকে গান পরিবেশন করেন ব্যান্ড দল কার্নিভাল, ইন্দালো, আর্ক, নেমেসিস ও মেঘদল। ব্যান্ড দল আর্কের ভোকালিস্ট হাসান (সৈয়দ হাসানুর রহমান) সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ যে মানুষের জন্য, জীবনের জন্য যে জীবন—এর প্রমাণ আজকের এই কনসার্ট।’
আর্টিস্ট অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড ফ্রন্টের অন্যতম কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু বলেন, গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে, গাজার পক্ষে সংহতি জানাতে এই আয়োজন। শিল্পীরা ছবি এঁকে, ছবি তুলে, গান কিংবা অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে পারেন।
এর আগে রাজধানী ঢাকার মিরপুর থেকে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ৭৫টি দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন মোরশেদ মিশু ও তাঁর দল। যা গাজায় চালানো ৭৫ বছরের হামলার প্রতীকী। কনসার্ট চলাকালে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগান দেওয়া হয়।