Thank you for trying Sticky AMP!!

এলিফ্যান্ট রোডে ৩৩১ নম্বর বাড়ি। সরকারি এই বাড়িতে আশরাফুল ইসলাম ২০১৪ সালে ওঠেন

সরকারি বাড়ি সাবেক আমলার দখলে, উচ্ছেদের মাঝপথে ফিরে গেছে কর্তৃপক্ষ

অবসরে যাওয়ার পরও সাড়ে পাঁচ বছর ধরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সরকারি একটি বাড়িতে থাকছেন এক অতিরিক্ত সচিব। এরই মধ্যে তাঁর কাছে বাড়িভাড়া বাবদ পাওনা জমেছে ৩০ লাখ টাকার বেশি। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সকালে সাবেক এই কর্মকর্তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদে অভিযান চালায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে অভিযানের মাঝপথে ফিরে আসতে হয় কর্মকর্তাদের।

এলিফ্যান্ট রোডে এই সরকারি বাড়িটির নম্বর ৩৩১। এটি ১০ কাঠার ওপর নির্মিত দোতলাবিশিষ্ট ভবন।

সাবেক এই অতিরিক্ত সচিবের নাম আশরাফুল ইসলাম। অবসরে যাওয়ার আগে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক ছিলেন। ওই সময়ই তিনি ওই বাড়িতে ওঠেন। এই আবাসন পরিদপ্তর থেকে মূলত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরকারি নথি বলছে, আশরাফুল ইসলাম বাড়ির দোতলায় ওঠেন ২০১৪ সালে। ২০১৭ সালের জুনে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যান। ২০১৮ সালের জুনে তাঁর অবসরোত্তর ছুটি শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, অবসরোত্তর ছুটি শেষ হওয়ার পর বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার কথা।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, তাঁকে বাড়িটি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি এতে সাড়া দেননি। আর সাবেক এই অতিরিক্ত সচিবের দাবি, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়নি।

আশরাফুল আরও দাবি করেন, তিনি ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আরও দুই বছর থাকার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

সরকারি নথি বলছে, আশরাফুল ইসলাম বাড়ির দোতলায় ওঠেন ২০১৪ সালে। ২০১৭ সালের জুনে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যান। ২০১৮ সালের জুনে তাঁর অবসরোত্তর ছুটি শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, অবসরোত্তর ছুটি শেষ হওয়ার পর বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার কথা।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে এসে আশরাফুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি বাড়িটি তাঁকে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন। তবে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। গত জুনে তাঁকে বাড়িটি ছেড়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর নানাভাবে অনুরোধও জানানো হয়। অবশেষে তাঁকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

আজ সরেজমিন দেখা যায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়িটিতে যান। তাঁর সঙ্গে নিউমার্কেট থানা থেকে অন্তত ১৬ জন পুলিশ সদস্য, ৪ জন আনসার সদস্য, আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তা, গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। বাড়িতে তখন আশরাফুল ইসলাম ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী ছিলেন। তাঁকে বেশ কয়েকবার বাড়ি ছাড়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এরপর শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। অন্তত ১০ জন শ্রমিক দিয়ে দোতলা বাসা থেকে মালামাল নামানো শুরু হয়। বাসা থেকে ফ্রিজ, খাট, সোফা সেটসহ প্রায় অর্ধেক মালামাল নামানোর পর সেখানে আসেন আশরাফুল ইসলাম। এ সময় তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে একটি আবেদনপত্র দেখান। আবেদনপত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী লেখেন, ‘২০২৪ সালের পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করা যেতে পারে। ঈদের পর এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে চলে যেতে হবে।’ শেষ পর্যন্ত তাঁকে উচ্ছেদ না করে মাঝপথে দুপুর ১২টার দিকে ফিরে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

উচ্ছেদ অভিযানে বাসা থেকে ফ্রিজ, খাট, সোফা সেটসহ প্রায় অর্ধেক মালামাল নামিয়ে নিচে রাখা হয়

সূত্র বলছে, আবেদনপত্রে আশরাফুল ইসলাম ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়িতে থাকার অনুরোধ করেন। যদিও মন্ত্রী তাঁকে সময় দেন ঈদুল ফিতর পর্যন্ত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাসা ছাড়তে ওই কর্মকর্তাকে নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি ছাড়েননি। আজ উচ্ছেদ করতে গেলে গণপূর্তমন্ত্রীর সুপারিশযুক্ত একটি আবেদন নিয়ে আসেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব। সে জন্য তাঁরা চলে গেছেন।

অন্যদিকে সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়নি। বাসায় থাকার বিষয়ে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে এসেছেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সরকারি বাড়িটি দখল করে আছেন। তিনি বাড়িভাড়া পরিশোধ করছেন না। আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাড়িভাড়া বাবদ তাঁর কাছে ৩০ লাখ টাকার বেশি পাওনা জমেছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যকে এলিফ্যান্ট রোডের বাসাটি বরাদ্দ দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সাবেক ওই আমলাকে উচ্ছেদ করতে না পারায় উপাচার্যকে বাসাটি বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে।