রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এই ধসে পড়া ভবনের মূল উৎস খোঁজার চেষ্টা করলে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরের লাফায়েট ভবনের সঙ্গে ছবির ধসে পড়া ভবনের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। লাফায়েট ভবন ২০১০ সালে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
লিংক: এখানে
তবে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বেশ কিছু পার্থক্য ধরা পড়ে। যেমন লাফায়েট ভবন ছিল ১৪ তলা (বেজমেন্ট ১ তলা এবং মাটির ওপরে ১৩ তলা)। কিন্তু এই ছবিতে মাটির ওপরে ভবনটির ১১ তলা দেখা যাচ্ছে।
এ ছাড়া লাফায়েট ভবনের আশপাশে আরও সুউচ্চ অট্টালিকা ছিল, তবে এই ছবিতে আশপাশে ফাঁকা বা নিচু ভবন। ফলে এটা বোঝা যাচ্ছে, ছবিটির সঙ্গে লাফায়েট ভবনের মিল থাকলেও এটি সেই ভবনের ছবিও নয়।
লিংক: এখানে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা ছবি শনাক্তের কয়েকটি ওয়েবসাইটের সাহায্যে এই ছবি শনাক্ত করার চেষ্টা করা হলো। সেসব ওয়েবসাইটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Inteligence বা AI) দিয়ে নির্মিত।
আবার ভূমিকম্পে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে হেলেপড়া কয়েকটি ভবনের ছবিও ছড়িয়েছে। ২ তলা একটি ভবনের মাঝামাঝিতে বড় ফাটল এবং বাদবাকি অংশ সম্পূর্ণ অক্ষত—এমন একটি ছবিও ফেসবুকে ঘুরছে।
এই পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘ভূমিকম্পের নির্মম শক্তি আজ আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মানুষ কত অসহায়! ছবির এই ভবনটি আড়াআড়ি ফেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো, প্রাণহানির খবর নেই, কিন্তু এ দৃশ্য সত্যিই শিউরে ওঠার মতো।’
লিংক: এখানে
ছবিতে বাড়ির নামফলক কিংবা তার অবস্থান জানা যায়, এমন কোনো তথ্য নেই। মূলধারার গণমাধ্যমে শুক্রবারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে এমন কোনো ছবি নেই। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমেও এমন ছবি খুঁজে পাওয়া গেল না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা ছবি শনাক্তের কয়েকটি ওয়েবসাইটের সাহায্যে এই ছবি শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয় এবং একাধিক ওয়েবসাইটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নির্মিত। অর্থাৎ এটিও কোনো বাস্তব ছবি নয়।
রাজধানীর দিয়াবাড়িতে উড়ালসড়ক ভেঙে পড়ার একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। আবার কোথাও কোথাও একই ভিডিও দিয়ে দাবি করা হয়েছে, এটি আশুলিয়ার ঘটনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক বাংলার ফেসবুক পেজেও ভিডিওটির লিংক দেওয়া হয়।
দাবিটি নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে সংগঠিত ভূমিকম্পে ঢাকায় উড়ালসড়ক ভেঙে পড়া নিয়ে কোনো সংবাদমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের বরাতে দেওয়া এই পোস্ট থেকেও ঢাকার দিয়াবাড়ি বা আশুলিয়ায় উড়ালসড়ক ভেঙে পড়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
লিংক: এখানে
ভাইরাল ভিডিওটি এআই জেনারেটেড কনটেন্ট যাচাইয়ের বিভিন্ন টুলের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। ডিপফেক ভিডিও শনাক্তের টুল ডিপফেক–ও–মিটারের বিশ্লেষণে ভিডিওটি শতভাগ এআই জেনারেটেড বলে জানায়।
‘ভূমিকম্পে ঢাকার অবস্থা। এখন পর্যন্ত নিহত তিন’ দাবি করে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
‘ভূমিকম্পে ঢাকার ভয়াবহ অবস্থা, এখন পর্যন্ত ঢাকার নিহতের সংখ্যা চার, বাড়তে পারে’ দাবি করে একটি ভিডিও প্রচার হয় গতকাল।
লিংক: এখানে
কিন্তু ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে যাচাই করে দেখা যায়, এটিও নেপালের ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের।
লিংক: এখানে
ভূমিকম্পে তেজগাঁওয়ে হেলে পড়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়—এ রকম দাবি করে কিছু গণামাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রোফাইল ও পেজ থেকেও তা প্রচার হতে থাকে।
যে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছিল, তারা পরে সংবাদটি সরিয়ে ফেলে এবং দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো থামেনি।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই ধরনের ঘটনার কোনো সত্যতা পায়নি।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে হেলে পড়েছে নিউ মার্কেটের সামনে বহুতল ভবন এই দাবিতে নিউ মার্কেটে একটি ভবনের ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দাবি করা হয় ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে একটি ভবন হেলে পড়েছে।
একই ভবনের ভিডিও ব্যবহার করে রানওয়ে পাকিস্তান নামক Digital & PR Agency অনলাইন পোর্টাল দাবি করে, ‘শুক্রবার ভোরে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প বাংলাদেশে আঘাত হানে। এতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। আকস্মিক এই ঝাঁকুনিতে অনেক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ভবনে ফাটল ও কাঠামোগত ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।’
লিংক: এখানে
একই ভবনের ভিডিও প্রচার করে আল–আরাবিয়া ইংলিশ টিভি চ্যানেল তাদের ফেসবুক পেজে দাবি করে, ‘জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে ঢাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন।’
লিংক: এখানে
ভূমিকম্পে ভবনটি হেলে পড়েছে দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটির নকশাই এমন। গতকালের ভূমিকম্পে এই ভবনটি হেলে পড়েছে, এমন কোনো তথ্য সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল ভূমিকম্প হওয়ার পরে উপরের মহলের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পুরো এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছি। নিউমার্কেট এলাকায় ভবনে ধস বা হেলে পড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিউমার্কেট এলাকায় কোনো ভবন হেলে পড়ার খবর তারা পাননি। তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেননি।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পে একটি গার্মেন্টসের ভবন ধসে পড়ার দৃশ্য দাবি করে দুটি ছবি ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
ঢাকায় ভূমিকম্পে ৮ তলা একটি ভবন ধসে পড়েছে দাবি করে এই পোস্ট করা হয়।
লিংক: এখানে
যাচাই করার জন্য রিভার্স ইমেজে সার্চ করে দেখা যায়, মিয়ানমারে গত মার্চের ভূমিকম্প নিয়ে ফ্রান্স ২৪ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে ভিডিও প্রতিবেদনের দেখা যাওয়া একটি ভবনের সঙ্গে এই ছবিটি হুবহু মিলে যায়।
লিংক: এখানে
আবার আরেকটি পেজে কয়েকটি ছবি পোস্ট করা হয়। সেখানে ভবনধস, সড়কধস—সবই বাংলাদেশের দাবি করা হয়।
কিন্তু যাচাই করে দেখা যায়, ছবিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক নেই। সেগুলো নেপালের ২০১৫ সালের এবং মিয়ানমারের এ বছরের মার্চের ভূমিকম্পের।
চলতি বছরের ২৮ মার্চ মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর রাজধানী নেপিদোর সড়কে ফাটল দেখা দেয়। এ ভূমিকম্পের পর অনেক ভবনেও ফাটল দেখা গেছে। সে সময় ছবিটি এএফপি তুলে ছিল।
এ ছাড়া ছবির কপিরাইট ক্রেডিট Naypong –তিনি থাইল্যান্ডের স্টক ফটোগ্রাফার। তাঁর একই ধরনের ভাঙা রাস্তার অন্য ছবিগুলোর বর্ণনায় Chiang Rai, Thailand উল্লেখ আছে। ছবির পরিবেশ, বিদ্যুৎ খুঁটির ধরন, রাস্তাঘাট, জলাশয়—সবই থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত এলাকার মতো। এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে ছবিটি কোন দেশের। তবে এই ১২ বছর পুরোনো এই ছবির সঙ্গে বাংলাদেশের এবারের ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরেকটি ছবি যেখানে দেখা যায়, দুটি ভবন দুই দিকে হেলে গিয়েছে। ছবিটি সার্চ করে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানে পাওয়া যায়। সেখানে ছবিটি এপির বলে উল্লেখ ছিল। প্রকাশিত প্রতিবদনটির শিরোনাম ছিল—নেপালের ভূমিকম্প: শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যৎ দুর্যোগে আরও মানুষের মৃত্যু হবে, বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালে।
ছবিটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ভবনগুলো। ভবিষ্যৎ দুর্যোগের ঝুঁকি মাথায় রেখে পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওডিআইয়ের কেটি পিটার্স। ছবি: ওয়ালি স্যান্টানা/এপি
লিংক: এখানে
আরেকটি ছবি রিভার্স ইমেজে সার্চ করে এ বছর মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। সেখানে শিরোনামটি এ রকম ছিল ‘ভূমিকম্পের পরে মিয়ানমারের মান্দালয়ে গোপনে গিয়ে যা দেখল বিবিসি’
লিংক: এখানে