বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোতে চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। আজ বুধবার তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জা থেকে তোলা
বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোতে চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। আজ বুধবার তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জা থেকে তোলা

আগামীকাল বড়দিন

ভালোবাসা ও শান্তির বার্তা দিতে রঙিন সাজে সেজেছে রাজধানীর গির্জাগুলো

আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি বড়দিন—যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। ইতিহাসের পাতায় এটি শুধু একটি ধর্মীয় ঘটনার স্মৃতি নয়; এটি মানবসভ্যতার এক গভীর পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত।

বড়দিন উপলক্ষে প্রার্থনার জন্য রঙিন সাজে সেজেছে ঢাকার গির্জাগুলো। বুধবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা এবং মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা চার্চ ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

কনকনে শীতের রাতে প্রায় দুই হাজার বছর আগে বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন যিশু। কারণ, যিশুর মা মরিয়মের তখন যাওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিল না। তাই মরিয়ম জীর্ণ এক গোশালায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোর প্রাঙ্গণে সাজানো হয়েছে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রতীকী গোশালা। সেখানে রয়েছে খড়ের ওপর শুয়ে থাকা শিশু যিশু, পাশে মাতা মরিয়ম ও সেন্ট যোসেফ। দৃশ্যটি যেন আগত মানুষদের চোখে এনে দেয় নীরব শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস। গোশালার চারপাশে জ্বলছে নরম আলো, যা বড়দিনের বার্তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

গির্জার ভেতরে ও বাইরে স্থাপন করা হয়েছে সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি। রঙিন আলো, তারা আর নানা অলংকারে সাজানো গাছগুলো পুরো পরিবেশকে উৎসবমুখর করে তুলেছে। দেয়ালজুড়ে ঝুলছে আলোকসজ্জা ও ধর্মীয় প্রতীক। সব মিলিয়ে পুরো গির্জা সেজেছে রঙিন ও আলোকোজ্জ্বল আবহে।

তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জায় বুধবার সন্ধ্যা সাতটা ও রাত নয়টায় প্রার্থনা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা ও নয়টায়ও প্রার্থনা করা হবে।

বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোতে চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। আজ বুধবার তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জা থেকে তোলা

মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা চার্চে প্রার্থনা শুরু হয় বুধবার রাত আটটায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় আরেকটি প্রার্থনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এই গির্জায়।

গির্জায় আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ ও আগামীকাল বিশেষ প্রার্থনা ও ধর্মীয় সংগীত উচ্চারিত হবে তাঁদের কণ্ঠে। তাঁরা শান্তি, ভালোবাসা ও মানবতার আহ্বান জানাবেন। অনেকেই নীরবে মোমবাতি জ্বালিয়ে যিশুর জীবনের আদর্শ স্মরণ করবেন।

প্রার্থনা শুরুর আগেই বুধবার বিকেলে তেজগাঁও জপমালা রানীর গির্জায় কথা হয় সোনিয়া গোমেজের সঙ্গে। তিনি এসেছেন রাজধানীর মনিপুরীপাড়া থেকে। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে জয়োকিন গোমেজ।

সোনিয়া গোমেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড়দিন আমাদের শুধু আনন্দ দেয় না, বরং একে অন্যের প্রতি সহমর্মী হতে শেখায়। এই আয়োজন তাই কেবল সাজসজ্জা নয়, এটি বিশ্বাস ও আশার এক জীবন্ত প্রকাশ।’

মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা চার্চের পুরোহিত ফাদার কাজল পিউরিফিকেশন বলেন, এবারের প্রার্থনার লক্ষ্য নিজেদের অন্তরে ও বিশ্বে যাতে শান্তি বজায় থাকে। এই প্রার্থনা হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান সবার জন্য। যিশুর জন্মতিথিকে কেন্দ্র করে আমরা যেন তাঁর জীবনাদর্শ এবং খ্রিষ্টীয় মূল্যবোধ নিজেদের জীবনে ও অন্যের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারি, সেই প্রার্থনা সবার জন্য।

তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জার পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস গোমেজ বলেন, যিশুর বাণী সব সময় কার্যকর। তিনি সব সময় প্রান্তিক মানুষের সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। এসবের মাধ্যমেই তিনি বিশ্বে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমাদের এবারের প্রার্থনা হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের মধ্যে যেন স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। গণতন্ত্র যেন প্রতিষ্ঠা হয়।