বিসিসির প্রকল্প

বানান ঠিক করে দেবে সরকারি ওয়েবসাইট

ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বাধা দূর করতে বেশ কিছু সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে।

  • ব্যয় ১৫৯ কোটি টাকা।বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকল্প নিয়েছে ২০১৬ সালে।

  • ১৬টি সুবিধা তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ

বাংলা বানান লিখতে গিয়ে যাঁদের ভুলত্রুটি হয়, তাঁদের বানান ঠিক করে দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইট হয়েছে। spell.bangla.gov.bd নামের এই ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা ভাষার লেখা দিলে তারা ভুলগুলো ধরিয়ে তা শুদ্ধ করে দেয়।

ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন এই সংস্থা ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহারকে নানা দিক থেকে সহজ ও কার্যকর করার জন্য বেশ কিছু কাজ করছে, যার একটি বানান শুধরে দেওয়া ওয়েবসাইট।

বিসিসির বাকি কাজের মধ্যে রয়েছে ছবির কোনো বাংলা লেখা নিমেষেই সম্পাদনার উপযোগী করে দেওয়া, ‘পিডিএফ’–এর লেখা ‘ওয়ার্ড ফাইলে’ রূপান্তর করা, ‘ওয়ার্ড ফাইলে’ বাংলা ‘ফন্ট’ ভেঙে গেলে তা ঠিক করা ইত্যাদি। সংস্থাটি এসব কাজ করছে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায়।

প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে এখন প্রকল্প বস্তবায়নের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে মুখে উচ্চারিত বাংলা ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পোজ (লিখিত রূপ) হয়ে যাবে, একইভাবে মুদ্রিত কাগজ থেকেও লেখা কম্পোজে রূপান্তরিত হবে, মুঠোফোন ও কম্পিউটার বাংলা লেখা পড়ে শোনাবে, বাংলা ভাষার চটজলদি যান্ত্রিক অনুবাদ পাওয়া যাবে, বাংলা ভাষার বিশাল মৌখিক ও লিখিত নমুনা (করপাস) গড়ে উঠবে। বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্য এ রকম ১৬টি সুবিধা তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

তাদের তৈরি করা পাঁচটি সেবার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। সেটি হলো, বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালাতে (ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট) প্রকাশ করার জন্য তৈরি ওয়েবসাইট। যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিদেশি ভাষার ছাত্র-শিক্ষক, ভাষাবিদ, গায়ক, অনুবাদক ধ্বনি নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের কাজে আসবে এই ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: ipa.bangla.gov.bd।

বিসিসির প্রকল্পের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহবুব করিম প্রথম আলোকে বলেন, এই কাজগুলো করার জন্য প্রচুর গবেষণা করতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় উপাত্ত তৈরি করে কাজ শুরু করতে হয়েছে। এ কারণেই একেকটি সফটওয়্যার তৈরিতে সময় লেগেছে। তিনি দাবি করছেন, প্রকল্পটি ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সমৃদ্ধ করার একটি ভিত্তি তৈরি করে দিচ্ছে। পরবর্তী সময়ে অন্যরা এর ওপর কাজ করতে পারবে।

ছাপানো লেখা ওয়ার্ড ফাইলে রূপান্তর ও মুখে বলা কথা লিখে দেওয়ার মতো কিছু সেবা এখন গুগলের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মাহবুব করিম বলেন, গুগল একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের সব সেবা বিনা মূল্যের নয়। তাদের যেসব সেবা এখন বিনা মূল্যে আছে, ভবিষ্যতেও যে তা থাকবে, তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এর ব্যবহার বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বিনা মূল্যে রাখবে।

পাঁচটি সেবার সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য বরাদ্দ প্রায় ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বানান সংশোধনের ওয়েবসাইটটি এখনো পরীক্ষামূলক। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আরও উন্নয়নে ব্যবহারকারীদের ভূমিকা রাখতে হবে। এই সাইট কোনো শুদ্ধ বানানকে ভুল বললে ব্যবহারকারী নিজে তা সংশোধনের জন্য সেখানে মতামত দিতে পারবেন।

পিডিএফ বা ছবিতে থাকা বাংলা লেখাকে সম্পাদনাযোগ্য ‘টেক্সটে’ রূপান্তর করে দেবে আরেকটি সাইট। কোনো বাক্য বা লেখা ইতিবাচক, নেতিবাচক নাকি নিরপেক্ষ, তা বুঝতে সহায়তা করবে বাংলা অনুভূতি বিশ্লেষণের জন্য আরেকটি সাইট। যারা লেখার পেছনের মানসিকতাকে চিহ্নিত করতে পারবে।

বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা লেখা প্রায়ই ভেঙে যায়। এই সমস্যা সমাধানেও আছে ভিন্ন একটি সাইট। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষার ডিজিটাইজেশন, ইশারা ভাষার ডিজিটাইজেশন, বাংলা স্টাইল গাইড তৈরি ইত্যাদি কাজ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য উত্তম। অনেক দিন ধরেই কাজটি চলছে। এত দিনে আরও অগ্রগতি হতে পারত। ব্যবহারকারীর মতামত নিয়েও তারা নিজেদের কাজগুলোকে সমৃদ্ধ করতে চাইলে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। মানুষ তো জানছে না।