
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই, ঠিক পরদিন, ১৭ ডিসেম্বর হিমালয়ের কোলে অবস্থিত আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভুটান মেতে ওঠে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবে। ১৭ ডিসেম্বর, ভুটানের ‘জাতীয় দিবস’। ১৯০৭ সালের এই দিনে ভুটানের ঐতিহাসিক পুনাখা জং-এ (দুর্গ) দেশটির সব স্থানীয় নেতা, যাজক ও জনগণ সর্বসম্মতিক্রমে উগেন ওয়াংচুককে তাঁদের প্রথম বংশানুক্রমিক রাজা বা ‘ড্রাগন কিং’ হিসেবে নির্বাচিত করেন।
ভুটানের এই বিজয়ের গল্প কোনো বিদেশি শক্তিকে তাড়ানোর গল্প নয়; বরং এটি নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে এক হওয়ার গল্প। উগেন ওয়াংচুকের অভিষেকের আগে ভুটান ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্তপ্রভুদের দ্বন্দ্বে লিপ্ত এক খণ্ড-বিখণ্ড জনপদ। গৃহযুদ্ধ আর অস্থিরতা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ১৯০৭ সালের এই দিনে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভুটান এক পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ভুটানের ইতিহাসে এটিই তাদের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতার ভিত্তিপ্রস্তর।
আজকের দিনে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশটির বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। হাজার হাজার মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাক ‘ঘো’এবং ‘কিরা’ পরে উৎসবে শামিল হন। মুখোশ পরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ‘চাম’ নাচ এবং লোকসংগীতের সুরে পুরো হিমালয় যেন কেঁপে ওঠে আনন্দের শিহরণে।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভুটানের এই দিনটি বিশেষ আবেগের। কারণ, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ ছিল এই ভুটান (৬ ডিসেম্বর)। আমাদের বিজয়ের ঠিক পরপরই তাদের এই জাতীয় দিবস যেন দুই দেশের আত্মার আত্মীয়তাকে আরও গভীর করে তোলে। ভুটানের এই দিনটি আমাদের শেখায়—শান্তি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখাই হলো একটি জাতির সত্যিকারের সুখ, যা তারা তাদের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ দর্শনের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখিয়ে চলেছে।