কর্মী নেওয়া দেশকেও বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে

জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফিলিপ গঞ্জালেস মোরালেস বাংলাদেশকে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকানুন জোরদার করার সুপারিশ করেন।

সরকারের তত্ত্বাবধানে একদল শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন

অভিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে ও বুঝতে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন অভিবাসীদের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফিলিপ গঞ্জালেস মোরালেস। গত ২০ থেকে ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি অভিবাসীদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা পরিস্থিতিও দেখে গেছেন। বাংলাদেশ ছাড়ার সময় অভিবাসীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশকে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকানুন জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের নেয়—এমন দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা এবং বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে সক্রিয় ভূমিকার কথাও বলে গেছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বাংলাদেশ সফরের সময় পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নাগরিক সমাজ, অভিবাসী কর্মী, রিক্রুটিং এজেন্সির পাশাপাশি কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অভিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তিনি তা মূল্যায়ন করবেন।

তিনি অভিবাসীদের সব ধরনের মানবাধিকার সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য সুপারিশ করবেন। এ নিয়ে আগামী জুনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন তিনি।

বাংলাদেশ ২০১৯ সালে অভিবাসীদের পাঠানোর দিক থেকে ছয় নম্বরে ছিল। বিগত কয়েক বছরে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মী বেড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও ২০২২ সালে এ দেশ থেকে কাজের সন্ধানে প্রায় ১০ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। এঁদের মধ্যে নারী ছিলেন ১০ শতাংশ। বিশ্বের ১৬০টি দেশে বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। অভিবাসীদের কল্যাণে বছরে দেশে প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৪০ শতাংশ এবং জিডিপির ৭ শতাংশ।

ঢাকা ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে অভিবাসীদের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফিলিপ গঞ্জালেস মোরালেস বলেন, ‘আমার মতো বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়াররা সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। একটি ছোট দল নিয়ে আমরা কাজ করি। বিশেষ বিষয়ে একটি রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে কী কাজ হচ্ছে, সেটা পর্যবেক্ষণ করে পরে তা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন তুলে ধরি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও আচরণের জায়গায় ঘাটতি কী, সেটাই আমরা দেখে থাকি।’

অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ তিন ধাপে

বাংলাদেশ সফর শেষে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ারের মূল্যায়ন হচ্ছে, এ দেশের অভিবাসীদের দেশ ছাড়ার আগের পর্ব, বিদেশে কাজের সময় এবং দেশে প্রত্যাবর্তন—এই তিনটি স্তরে নানা সমস্যা আছে। তাই সরকারকে অভিবাসীদের সুরক্ষায় তিন ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই বিশেষ দূতের মতে, বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) নিয়মকানুন জোরালোভাবে অনুসরণ করা এবং পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ অভিবাসীদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। তবে বেসরকারিভাবে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে জটিলতা অনেক বেশি। বায়রার নিবন্ধনকৃত প্রায় ১ হাজার ৭০০ সদস্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের ওপর নির্ভর করে। বিষয়টি সবার জানা। এরপরও এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কীভাবে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে, তা নিয়ে কোনো আইনি কাঠামো না থাকাটা উদ্বেগের।

গঞ্জালেস মোরালেস বলেন, বিদেশে যেতে মরিয়া অভিবাসীরা যেকোনো উপায়ে দেশ ছাড়তে চায়। ফলে অনেকে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে বা ধারদেনা করে বিপুল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেন। পুরো প্রক্রিয়া অনেক অভিবাসীর ওপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা অভিবাসীদের ফাঁদে ফেলেন।

দক্ষ অভিবাসী কর্মী গড়ে তুলতে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেন জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার। তিনি বলেন, অভিবাসী কর্মীদের দেশ ছাড়ার আগে পর্যাপ্ত তথ্য জানাতে হবে। কোথাও নিপীড়নের শিকার হলে প্রতিকার খুঁজতে হবে। তিনি বিদেশ গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের ডেটাবেজ তৈরির বিষয়টিকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করাসহ তাদের নিয়ন্ত্রণে জোরদার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

ফিরে আসা প্রবাসীদের পরিণতি

দেশে ফিরে আসা অভিবাসী বিশেষ করে নারীরা সমাজে কলঙ্ক ও বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকেন। শারীরিকভাবে নিপীড়ন কিংবা পাচারের শিকার নারীরা প্রতিনিয়ত কলঙ্কের বোঝা বয়ে বেড়ান। তাঁদের নানা দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয়। ফিরে আসা অন্যরাও বৈষম্যের শিকার হন। পরিবারের প্রত্যাশা থাকে, তাঁদের আপনজন বিদেশ থেকে বিপুল টাকা নিয়ে দেশে ফিরবেন।

কিন্তু বিদেশে শোষণের শিকার হওয়ায় তাঁরা আপনজনের প্রত্যাশা অনুযায়ী টাকা নিয়ে ফিরতে পারেন না। তাঁরা পরিবারে বঞ্চনার শিকার হন। ফলে ফিরে আসা লোকজনের পুনর্মিলন একেবারেই দুরূহ। এমনকি ফিরে আসা অভিবাসী কর্মীরা বিদেশে যে দক্ষতা অর্জন করেন, দেশে এসে তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কোনো কাজ পান না।

উপাত্তের গুরুত্ব অপরিসীম

বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও সুরক্ষার স্বার্থে উপাত্ত সংগ্রহের ওপর জোর দেন জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার। কাজের জন্য বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয় স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের। নিহত কর্মীরা কোনো ক্ষতিপূরণ পান না। ওই অভিবাসী কর্মীর আপনজনও সব দিক থেকে বঞ্চিত হন। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় ফিলিপ গঞ্জালেস মোরালেসকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক কর্মী বিদেশে মারা গেছেন শুনেছি। তাঁদের মৃত্যুর কারণগুলো কী? দুর্ঘটনা, নির্যাতন নাকি খুন? কর্মীদের মৃত্যুর সঠিক কারণ নিয়ে উপাত্ত থাকাটা জরুরি।’

জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার তাঁর ১০ দিনের বাংলাদেশ সফরকালে অভিবাসন নিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার শুনেছেন। তাঁর মতে, শুধু নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তই নয়, অন্য জরুরি অনেক তথ্যের পাশাপাশি অভিবাসীদের মানবাধিকারের বিষয়ে সঠিক চিত্র পেতে পরিসংখ্যান খুব জরুরি। আর উপাত্ত সংগ্রহ, এর ব্যবস্থাপনা এবং তা ডিজিটালাইজড করা বাংলাদেশের বিপুল অভিবাসীর স্বার্থে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আরও ভালো খুঁজতে গিয়ে ঝুঁকিতে

বাংলাদেশের অভিবাসীদের অবৈধ পন্থায় উন্নত দেশ বিশেষ করে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা অজানা নয়। জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার অভিবাসী-সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন, আরও ভালো কাজ এবং ভালো উপার্জনের আশায় অনেক বাংলাদেশি নিজেদের গায়ে ‘অবৈধ অভিবাসীর’ তকমা লাগিয়ে ফেলেন।

বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার জেনেছেন, বৈধভাবে নির্দিষ্ট একটি দেশে যাওয়ার পর বাংলাদেশের অভিবাসীদের কাজের পারমিট বা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে বৈধ পথে যাওয়ার পরও তাঁদের পরের অবস্থানটা অবৈধ হয়ে গেছে। অনেকে আবার সাগর কিংবা স্থলপথে বিপজ্জনক যাত্রায় যোগ দিচ্ছেন। অনিয়মিত অভিবাসীরা মানব পাচারে যুক্ত অপরাধীদের ফাঁদে পড়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন। এতে তাঁদের আটকে পড়ার বা দেশে ফিরতে জটিলতার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে অনিয়মিত অভিবাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তা সমন্বিতভাবে মোকাবিলায় রাষ্ট্রের পদক্ষেপ বাড়ানো দরকার।

দক্ষ প্রতিবেশীদের গন্তব্য যখন বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক অভিবাসী যেমন বাইরে যাচ্ছেন, তেমনি বিদেশ থেকে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের লোকজনও আয়ের জন্য এ দেশে আসছেন। জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফিলিপ গঞ্জালেস বলেন, ‘আমি এখানে এসে জেনেছি, বাংলাদেশে আসা বিদেশি মানুষের একটি অংশ দক্ষতার দিক থেকে মাঝারি ও উঁচু মানের।

এঁদের কেউ কেউ পর্যটন ভিসায় এসে বাংলাদেশে কাজ করে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) নিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ করে চলে যান। তবে বাংলাদেশে কর্মরত অভিবাসীদের তথ্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাই বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের বিষয়ে নজরদারি শক্তিশালী করা বাঞ্ছনীয়।’

দায় বাংলাদেশের একার নয়

বাংলাদেশ সফর শেষ করার আগে অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষায় সরকারের উদ্বেগ দূর করার পাশাপাশি যেসব দেশ কর্মী নেয়, তাদের দায়িত্বের কথাও জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভিবাসীদের বড় অংশ নিয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এসব দেশের সরকারকে অবশ্যই বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও প্রমাণিত হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। তাই অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সহযোগিতা জোরদার করা গুরুত্বপূর্ণ।

গঞ্জালেস মোরালেস বলেন, ‘অভিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমি অতীতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন দিয়েছি। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানো চিঠিপত্রে কাফালা ব্যবস্থা রহিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। কারণ, এই পদ্ধতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়োগকর্তাদের বিপুল ক্ষমতা দিয়েছে। এই ব্যবস্থার কারণে সেখানে অভিবাসী কর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি নিয়োগকর্তাদের দায়মুক্তির বিরাট ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ করে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।’

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা

জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দেখতে কক্সবাজারে যান। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় গঞ্জালেস মোরালেস বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহনশীলতা দেখে অভিভূত। তাদের অনেকে পাঁচ বছর ধরে শিবিরে আছে। বাকিরা নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এ দেশে এসেছে, তারাও ৩০ বছর ধরে শিবিরে আছে।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান অত্যন্ত জরুরি। তাঁদের আইনি মর্যাদা না থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিনি যেসব শিবির পরিদর্শন করেছেন, সেখানে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মসনদ দেওয়া হয়নি।

গঞ্জালেস মোরালেস রোহিঙ্গাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ ও তাদের দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর এই সুপারিশ রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অনেক রোহিঙ্গাই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। তিনি বিশেষত অগ্নিকাণ্ড ও বন্যাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মাথায় রেখে শিবিরের আবাসনব্যবস্থার মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ায় মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হতাশার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে গঞ্জালেস মোরালেস বলেন, হতাশা থেকে অনেকে শিবির ছাড়ার চেষ্টা করেন। এতে পাচার, শোষণ, যৌন সহিংসতা এবং আক্রমণের শিকার হন, যা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শিবিরে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। ফলে শিবিরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো জরুরি।

রোহিঙ্গাদের অনেকেই মালয়েশিয়া ও প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার চেষ্টায় বাংলাদেশ ছেড়েছে। বিপজ্জনক নৌযাত্রায় অনেকে সাগরে মারা গেছেন। অন্যদিকে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে আসা অনেককে পুশব্যাক করা হচ্ছে। নতুন আশ্রয়ের খোঁজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেসব রোহিঙ্গা সমুদ্র পাড়ি দেন, তাঁদের সুরক্ষায় একটি সমন্বিত আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট থেকে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অভিবাসনসংক্রান্ত অনেক উদ্যোগের মতো এখানেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।