ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোয় স্রেফ রক্তক্ষরণ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারো কারখানা, ছাঁটাই হয়ে গেছে বহু শ্রমিক।
ব্যাংকে ডলার-সংকট। বিপদে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। শিল্পকারখানাগুলো চালাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। গাড়ির ইঞ্জিন, কৃষি যন্ত্রাংশ নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতি, নাট-বল্টু বা বেয়ারিং—এসব দেশে তৈরি হলেও কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। অথচ ডলার–সংকটে ব্যবসায়ীদের ঋণপত্র (এলসি) খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। ওষুধশিল্প, সিমেন্ট খাত, চামড়াশিল্প, ইলেকট্রনিকস পণ্য, মুদ্রণশিল্প—সবখানেই কাঁচামাল–সংকট দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য বা মূলধনি যন্ত্রপাতি—এই সব কটি ক্ষেত্রেই আমদানি কমে গেছে। বস্ত্র খাতের জন্য তুলা ও সুতা আমদানি কমেছে, প্লাস্টিকের তৈরি সুতা, সিনথেটিক ফাইবার ও ইয়ার্ন আমদানি কমেছে ব্যাপক হারে।
বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। সেখানেও কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে মেশিন বসে আছে, শ্রমিক বসে আছে, উৎপাদন কমছেই।
এদিকে গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গত এক দশকে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। গত জানুয়ারি মাসে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম একলাফে বাড়ানো হয় ১৭৯ শতাংশ! ইস্পাত, কাচ, সিমেন্ট, রি-রোলিং কারখানায় গ্যাসের দরকার। ফাউন্ড্রি, বেকারি, অ্যালুমিনিয়াম পণ্য উৎপাদনেও গ্যাসের প্রয়োজন।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা বেশি টাকা দিয়েও গ্যাস পাচ্ছেন না। গ্যাসের চাপ কম থাকায় ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। এদিকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি টন রডের দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন। সব মিলিয়ে কাঁচামাল–সংকট, গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই, গ্যাস–বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম, ব্যবসায়ীরা বিপর্যস্ত।
বাংলাদেশে গ্যাসের এই সংকট হলো কী করে? কয়েক দশক ধরে আমাদের ভূতত্ত্ববিদেরা কিন্তু একবারও বলেননি যে দেশে গ্যাস নেই। বরং তাঁরা বরাবরই বলেছেন, বাংলাদেশের মতো বদ্বীপ অঞ্চলে ঠিকঠাক অনুসন্ধান চালালে জল-স্থল সবখানেই বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্তত তিনটি প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান (ইউএসজিএস, এনপিডি ও র্যাম্বল) ১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একাধিক সমীক্ষায় জানিয়েছে, বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত প্রায় ৩২ টিসিএফের ওপর (প্রায় ৩০ বছরের মজুত)। অর্থাৎ দেশি গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়াতে পারলে, ডলার খরচ করে বিদেশি গ্যাস আমদানি করার প্রয়োজন নেই।
মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস এবং ভারতের ওএনজিসি শুধু সঠিক পরিকল্পনার কারণে মাত্র কয়েক দশকের মাথায় গভীর সমুদ্রেও গ্যাস উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছিল। আর আমাদের এখানে তেল-গ্যাস উত্তোলনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বসিয়ে রেখে একের পর এক বিদেশি কোম্পানি ডেকে আনা হয়েছে।
গত ৩০ বছরে বাপেক্স হাজার হাজার লাইন কিলোমিটার সার্ভে করেছে, একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। এ ছাড়া বাপেক্স কাজ করে অত্যন্ত সস্তায়। প্রতিটি কূপ খনন করতে গাজপ্রম নেয় ১৮০ কোটি টাকা, বাপেক্স নেয় মাত্র ৮০ কোটি টাকা। তাহলে নিজেদের সক্ষম ও সফল প্রতিষ্ঠানটিকে বসিয়ে রেখে সম্ভাবনাময় দেশি গ্যাসক্ষেত্রগুলোকে দ্বিগুণ-তিন গুণ খরচে গাজপ্রমের মতো বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হলো কেন? তা–ও আবার বিনা টেন্ডারে! অর্থাৎ দেশি প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ সক্ষমতা থাকলেও ওদের বসিয়ে রাখো!
চুক্তি করো বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে, আর বিল দাও ডলারে! প্রশ্ন হলো, সরকার ও প্রশাসনের অনেকেই না হয় শতকোটি টাকা কমিশন বাণিজ্যের ব্যস্ত ছিল, কিন্তু দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা গত এক দশকে সরকারি জ্বালানিনীতির বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করেননি কেন? দেশি গ্যাসের সবচেয়ে বড় উপকারভোগী তো তাঁরাই।
তাহলে আরেকটু পেছনে ফিরি। ২০১৬ সালে যখন ঢাকঢোল পিটিয়ে বিদ্যুৎ খাতের সরকারি মাস্টার প্ল্যানটি ‘রিভাইস’ করা হলো, একের পর এক বিদেশি কয়লা আর বিদেশি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা শুরু হলো এবং দেশীয় চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলা হলো, তখন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোথায় ছিল?
আট বছর ধরে ক্রমাগত বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এই মাস্টার প্ল্যানটি আত্মঘাতীমূলক। এ রকম লাগামছাড়া আমদানি দেশের বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। মাঠে বামপন্থীদের আন্দোলন ছিল, তারা বারবার দাবি করেছে, দেশি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, দেশের গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে। জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন, দেশি গ্যাস বাদ দিয়ে বহু গুণ বেশি খরচে এভাবে বিদেশি এলএনজি কেনা দেশের অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ফেলবে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস’ ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে একের পর এক সতর্কবার্তা দিয়ে গেছে। তারা বারবার বলেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাদ দিয়ে খরচবহুল কয়লা আর এলএনজি আমদানির এসব পরিকল্পনা বাংলাদেশের ডলার রিজার্ভকে তলানির দিকে নিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তা–ই। সম্প্রতি সিপিডির বরাতে জানা যায়, প্রচুর তেল–গ্যাস আমদানি করেছে ঠিকই, কিন্তু প্রায় ৯৭ কোটি ডলারের বিল পরিশোধ করতে পারছে না!
তার মানে আজকের এ অবস্থা দৈবদুর্বিপাকের মতো আবির্ভূত হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গেও এর সম্পর্ক নেই। বরং বহু আগের থেকেই সতর্কবার্তা ছিল। সরকার না হয় জ্বালানিবিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান, বিদেশি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং মাঠের আন্দোলন—কোনো কিছুরই পরোয়া করেনি, কিন্তু দেশের সংবাদপত্রগুলো তো নিয়মিতই এসব সতর্কবার্তা ফলাও করে প্রচার করেছে। তাহলে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক এই মাস্টার প্ল্যানটির সমালোচনা করেনি কেন?
দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে যে ইতিহাসের সেরা কেলেঙ্কারিটা হতে যাচ্ছে, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে সেই খবর ছিল না? ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো যাঁরা চালান, তাঁরা সবাই উচ্চশিক্ষিত, দেশ–বিদেশ ঘুরেছেন, মার্কেট বোঝেন, অর্থনীতি বোঝেন, ডলার–সংকট বোঝেন, জ্বালানিটাও বোঝেন। এটা তো স্পষ্ট যে গ্যাস–বিদ্যুতের সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের শিল্পকারখানাগুলো। দেশের সস্তা গ্যাস বাদ দিয়ে বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার এলএনজি ও কয়লা আমদানি করার এই দুর্বুদ্ধি কী করে সমর্থনযোগ্য হতে পারে? তাহলে দেশের সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সরকারের সবচেয়ে কাছের লোকগুলো এসব শিল্পবিরোধী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়াননি কেন?
এলএনজি আমদানির তোড়জোড় শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আমদানি করা এলএনজির প্রথম চালানটি ঢোকে বাংলাদেশে। ওই সময়ে এফবিসিসিআইয়ের নেতারা দেশের জ্বালানি খাতের আসন্ন সংকট নিয়ে কী অবস্থান নিয়েছিলেন? প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, এফবিসিসিআইয়ের তৎকালীন সভাপতি ওই এপ্রিল মাসেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় ‘দীর্ঘস্থায়ী’ আওয়ামী সরকার যে কত ভালো, সেটা বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘জাপানে একটি দল ৪৫ বছর ক্ষমতায় ছিল, লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরকে পাল্টে দিয়েছেন, কাজেই দেশে একটি দীর্ঘস্থায়ী সরকার থাকলে তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’ অর্থাৎ বোঝা গেল জ্বালানি খাতে সর্বনাশ শুরু হওয়ার একেবারে গোড়া থেকেই এই সরকারের সব কর্মকাণ্ডের প্রতিই ব্যবসায়ী নেতাদের পূর্ণ সমর্থন ছিল।
গত কয়েক বছরেও আমরা দেখেছি, সরকারের ইচ্ছাকৃত উল্টো নীতির কারণে দেশের শিল্পকারখানাগুলো যখন ক্রমাগত ধুঁকছে, দেশের ব্যবসায়ী নেতারা তখন সরকার তোষণে ব্যস্ত ছিলেন। গত জুলাই মাসেই আমরা দেখলাম বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক ঝলমলে অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা সরকারকে তার ‘উন্নয়ন’কাজের জন্য ধন্য ধন্য করছেন।
এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এমসিসিআই কেউ বাকি নেই। সবাই উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। একদিকে সাধারণ ব্যবসায়ীরা জেনারেটর চালাতে চালাতে বিধ্বস্ত, অতিরিক্ত বিল দিয়েও গ্যাস পাচ্ছেন না, আরেক দিকে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এক সভাপতি সরকারের গুণগান করতে করতে বলেই বসলেন, প্রথমত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাই (দেশের সব কটি পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হলে হাসাহাসি এবং সমালোচনার জোয়ার বয়ে গিয়েছিল।)
শেষ পর্যন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই মুখ খুললেন ব্যবসায়ীরা। গত আগস্ট মাসে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক সেমিনার করল এফবিসিসিআই। সেমিনারের নাম দিল ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার: বঙ্গবন্ধুর দর্শন’। এত দিনে ব্যবসায়ী নেতারা দুঃখ করে বললেন, আমদানিনির্ভরতা মোটেও ভালো নয়, স্থানীয় গ্যাসের অনুসন্ধান করতে হবে। সরকার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছে, সব কটিই বিদেশি জ্বালানিনির্ভর, এত বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কিনতে ডলার আসবে কোত্থেকে?
প্রশ্ন ওঠে, সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার এত দিন পর তাদের হুঁশ ফিরল?
ব্যক্তিগতভাবে এক দশক ধরে এই লেখক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত রক্ষার আন্দোলনগুলোর সঙ্গে জড়িত। খুব কাছ থেকে দেখা হয়েছে এসব আন্দোলনে তরুণ ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণ। ২০১২ সালে সুনামগঞ্জের সুনেত্র অভিমুখে লং মার্চের দাবি ছিল, বিদেশি কোম্পানি নয়, দেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই গ্যাস তুলতে হবে।
সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনের দাবি ছিল, আমদানি করা কয়লা নয়, বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এই যে বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের গ্যাস–বিদ্যুৎ রক্ষার আন্দোলন করল, এই আন্দোলনগুলো তো করার কথা ছিল বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই বা চেম্বার অব কমার্সগুলোর। দেশের জ্বালানি খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আখেরে কাদের লাভ? বামদের না ব্যবসায়ীদের?
একটা সীমিত সম্পদের দেশে শতকোটি টাকা ঋণ নিয়ে তাঁরা শিল্পকারখানা স্থাপন করেছেন, দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন, নিয়মিত মন্ত্রী মহোদয়গণকে ডেকে ‘প্রণোদনা’ চেয়েছেন, করপোরেট কর কমিয়েছেন, গ্যাস–বিদ্যুতের নিরাপত্তা চেয়েছেন, অথচ গ্যাস–বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘ এ দশক ধরে যে কেলেঙ্কারিটা হলো, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চুপ ছিলেন কেন?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদ্যুৎ খাতের চরম সংকটের দিনে তাঁদের কেউ কেউ ছিলেন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থী। বাকিরা লাইন দিয়েছিলেন রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স পেতে। অথচ কে না জানে, এই রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ করেছে। সরকার ব্যবসায়ীদের জমি দিয়েছে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তেলটাও আমদানি করে দিয়েছে।
একদিকে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রাখা হয়েছে, আরেক দিকে স্বল্প চাহিদার মৌসুমে রেন্টাল কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ–সংকটের সুযোগে এই রেন্টাল ব্যবসায়ীরাই দ্রুততম সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে।
এখন যে বলা হচ্ছে, রপ্তানি আয় কমে গেছে, প্রবাসী আয় কমে গেছে, হুন্ডি বেড়ে গেছে, এই জন্যই সংকট, কিন্তু ডলার–সংকটের পেছনে কারা? ইতিহাসের সেরা অর্থ পাচারটা করল কে? ‘গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি’ কিন্তু খুব স্পষ্ট করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকেই অর্থ পাচারের জন্য দায়ী করেছে। তাদের রিপোর্ট থেকে এটা স্পষ্ট যে গত ১৪ বছরে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার করেছেন দেশের বড় ব্যবসায়ীরাই (আমদানি রপ্তানির আড়ালে)।
আরেক দিকে এই দেশের মহান সংসদটির ৬০ শতাংশই চলে গেছে বড় বড় ব্যবসায়ীর দখলে। দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর নিয়ন্ত্রণও চলে গেছে শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর সিন্ডিকেটের দখলে। অর্থাৎ একদিকে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের আঁতাত, আরেক দিকে রুগ্ণ, পিষ্ট জনগণ। আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, বড় ব্যবসায়ীদের এই রমরমা দিনেই বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোতে স্রেফ রক্তক্ষরণ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারো কারখানা, ছাঁটাই হয়ে গেছে বহু শ্রমিক।
প্রশ্ন ওঠে, এই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো কি আসলেই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করে? দেশের অর্থনীতির ভালো চান?
মাহা মির্জা, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক