
নুরুল হকসহ গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে নুরুলের অবস্থা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনাপ্রধানকে বক্তব্য দিয়ে ক্লিয়ার করতে হবে, তিনি এ ঘটনার নির্দেশনা দিয়েছেন কি না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ক্লিয়ার করতে হবে, প্রধান উপদেষ্টাকে বক্তব্য স্পষ্ট করতে হবে। আজকে নুরুল হকসহ আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, এ হামলার জন্য সরকারের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নুরুল হকের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’
রাশেদ খান আরও বলেন, ‘নুরুল হককে দেখতে এসেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি আমাদের শিক্ষক। আমাদের এখানে যারা আছে, তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আজকে নুরুল হকের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, এটা আওয়ামী লীগের আমলেও কোনো নেতার ওপর হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেনাবাহিনী-পুলিশ বাহিনী এক হয়ে একসঙ্গে হামলা অতীতে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘এইবার কিন্তু গণ অধিকার পরিষদ একা একা ঘেরাও করবে না। জুলাইয়ের শক্তি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি—সবাই একতাবদ্ধ হয়ে আওয়ামী প্রেতাত্না, দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে আমরা যমুনা ঘেরাও করব। জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ এবি পার্টি সবার উদ্দেশে বলতে চাই, নির্বাচন, সংস্কার, বিচার নিয়ে হাউকাউ করছি। আমরা বিভাজিত হয়ে পড়েছি, এই সুযোগে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ জাতীয় পার্টির ঘাড়ে ভর করে ফিরে আসার চক্রান্ত করছে। সুতরাং একতাবদ্ধ হয়ে যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নামতে হবে। না হলে একে একে সবার ওপরে হামলা করে, তারপর এই সরকারকে সাইজ করে আরেকটি ১/১১ তৈরি করা হবে।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘নুরুল হকের অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে। সরকারের কাছে দাবি, বিশেষ বোর্ড গঠন করে যাতে নুরের চিকিৎসা হয়। তিনি যাতে দ্রুত শঙ্কামুক্ত হন। গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার যে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে আমরা একমত। তদন্ত করতে ছয় ঘণ্টাই যথেষ্ট। এ সময়ের মধ্যে তদন্ত করে আমরা চাই তারা কী পদক্ষেপ নিলেন, সেটা আমাদের জানাবেন।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আসিফ নজরুলের সঙ্গে আমরা এতক্ষণ কথা বলেছি। তিনি আমাদের সামনেই প্রশাসনের উচ্চপদস্থ জায়গায় কথা বলেছেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আশাবাদী, তিনি আমাদের দাবিগুলো পৌঁছে দেবেন।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেন নেতা–কর্মীরা। তাঁরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে হামলার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
নুরুল হককে শুরুতে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এর আগে রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে গণ অধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের কয়েক শ কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকার, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
স্লোগানের মধ্যে ‘নুরের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে’, ‘আপা গেছে যেই পথে, জাপা যাবে সেই পথে’; ‘রাজপথে রক্ত কেন, আসিফ নজরুল জবাব চাই’; ‘নুরের ওপর হামলা কেন, বিচার চাই, করতে হবে’; ‘নুর ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ প্রভৃতি ছিল।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘নুর গণ-অভ্যুত্থানের একজন সহযোদ্ধা। তাঁকে চেনার পরও টার্গেট করে তাঁকে পেটানো হয়েছে। কার নির্দেশে এভাবে তাঁকে পেটানো হয়েছে, আমরা জানতে চাই।’
গুরুতর আহত নুরুল হককে হাসপাতালে দেখতে যান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। হাসপাতালের একজন আনসার সদস্য বলেন, ‘সাড়ে ১১টার দিকে স্যার হাসপাতালে আসেন।’
নুরুল হক আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ২৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নুরুল হকসহ অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা এ মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে আমরা আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর এই হামলার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অনাকাক্ষিত ও অনভিপ্রেত। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, শন্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করি। জাতি যখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের হামলা ফ্যাসিবাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
নুরুল হকের ওপর প্রশাসনের হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। শুক্রবার রাতে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদ–উত্তর এই সময়ে নুরুল হকের ওপর এ ধরনের হামলা কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না, সহ্য করা যায় না। বিবৃতিতে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান চাওয়া হলো, ফ্যাসিবাদের সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের উত্থান রুখে দেওয়া। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।’
এ ছাড়া নুরুলের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতে মিছিলও করেছে।