জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময়ে এই দিনে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। বছরপূর্তির সেদিনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ‘এই দিনে আমরা শপথ নিচ্ছি যে আমাদের সরকার কিংবা ভবিষ্যতে কোনো সরকার বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করবে না।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে একটি হোটেলে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর এবং স্টারলিংকের সেবা চালুর বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অঙ্গীকার করেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ জানান, এর আগে গত ২০ মে স্টারলিংকের সফট লঞ্চ (ছোট পরিসরে যাত্রা) হয়েছিল। এবার স্পেসএক্সের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা আসায় স্টারলিংক সেবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী নেতারা (স্পেসএক্সের প্রতিনিধিদল) এসেছেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বার্তা দিতে যে বাংলাদেশ আর কখনো বিচ্ছিন্ন থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, এ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত কখনো ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে না। ভবিষ্যতেও যেন কোনো সরকার তা করতে না পারে, সে জন্য টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধন করা হবে। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। জটিল ধরনের আইন, তাই সময় লাগছে। এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পারলে ভালো হতো। সরকার আইনটি সংশোধন করতে সময় নিচ্ছে এমন পর্যায়ে নিতে যে আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশে যে ব্যবসা করা সহজ, সেই ব্র্যান্ডিং স্টারলিংকের আসার মাধ্যমে ভালো হবে। পেপালের মতো কোম্পানিকে বাংলাদেশে আনতে সুবিধা হবে।
স্টারলিংকের গ্রাহকসংখ্যা প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ বলেন, এটা স্টারলিংকই বলতে পারবে। তবে সামনে বিটিআরসির মাধ্যমে জানা যাবে। কিছু আইনি জটিলতার কারণে বেশির ভাগ গ্রাহককে এখনো সেবা দেওয়া যায়নি। শুল্ক–মূসকের কিছু বিষয় রয়েছে, সেগুলোর সমাধানে কাজ চলছে। পাশাপাশি জানান স্টারলিংকের যেসব প্রযুক্তি দেশে ঢুকবে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই।
স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশ সফর করছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লরেন বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যে কথোপকথন হয়েছিল, সেটা এখন বাস্তব। স্টারলিংক ১৫০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত দক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আগে কখনো দেখা যায়নি। স্টারলিংকের মাধ্যমে শুধু স্যাটেলাইট সেবা চালু হচ্ছে না, ভালো শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট কনসালট্যান্ট রিচার্ড গ্রিফিথস, ডাক, টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জহিরুল ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকইমাদুর রহমান প্রমুখ।