Thank you for trying Sticky AMP!!

নির্মম, পৈশাচিক!

দোকানঘরের খুঁটির সঙ্গে দুই হাত পেছন দিক করে বাঁধা। রোলার দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত থেমে থেমে চলছিল আঘাত। বাঁধা অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ, ‘আমি মরি যাইয়ার! কেউ আমারে বাঁচাও রে বা!’ এতেও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। শেষে আকুতি, ‘আমারে পানি খাওয়াও!’ তখন তাঁর চোখ-মুখ বেয়ে অঝোরে ঘাম ঝরছিল। তাঁকে বলা হলো ‘পানির বদলা ঘাম খা!’
এসব কারও বর্ণনা নয়, ভিডিওচিত্রে ধারণ করা এক কিশোরকে নির্যাতনের দৃশ্য। গত বুধবার সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে শেখ মো. সামিউল আলম ওরফে রাজন (১৩) নামের সবজিবিক্রেতা কিশোরকে চোর অভিযোগে পেটানোর সময় ওই ভিডিওচিত্র ধারণ করেন নির্যাতনকারীরাই। নির্যাতনের একপর্যায়ে মৃত্যু হয় সামিউলের।
এভাবে সামিউলকে মেরে ফেলে একটি মাইক্রোবাসে করে লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় নির্যাতনকারী অভিযোগে সিলেট নগরের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা মুহিত আলমকে (৩৫) আটক করে পুলিশে দেন এলাকাবাসী।
সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। মামলায় মুহিতসহ তাঁর ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাঁদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুহিতকে আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আজ রোববার আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।
সামিউলকে নির্যাতন করার ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রটি এলাকাবাসীর মাধ্যমে গত শুক্রবার রাতে প্রথম আলোর সিলেট কার্যালয়ে পৌঁছে। এতে দেখা গেছে, কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকানঘরের বারান্দার খুঁটিতে সামিউলকে বেঁধে রাখা হয়েছে। ভিডিওচিত্রে তিন-চারজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও ভিডিওধারণকারী আরও দুজনের কথাবার্তা ও আগন্তুক একজনের উপস্থিতি ছিল।
শুরুতে ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক...কারা আছিল...’ বলতে বলতে চুলের মুঠি ধরে সামিউলকে মারধর করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে কয়েক মিনিটের জন্য তার হাতের বাঁধন খুলে হাঁটতে দেওয়া হয়। ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরও মারো...’ বলে সামিউলের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে আরেক দফা পেটানো হয়।
মারধর করার সময় একদিকে সামিউলের আর্তচিৎকার, আর অন্যদিকে নির্যাতনকারীদের মুখে অট্টহাসিসহ নানা কটূক্তি শোনা যায়। যে ভিডিও ধারণ করার কাজটি করছিল, তাকে নির্দেশ করে নির্যাতনকারীরা জানতে চায় ঠিকমতো ভিডিও ধারণ হচ্ছে কি না। একজনকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘ফেসবুকে ছাড়ি দে, এ তো খাঁটি চোর! সারা দুনিয়ার মানুষ দেখব...’। শেষ দিকে সলা-পরামর্শও চলে। নির্যাতনকারী একজন সঙ্গীদের কাছে জানতে চায়, ‘কিতা করতাম?’ অপর একজনকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘মামায় যে কইছন, ওই কাম করি ছাড়ি দে!’
সামিউলের বাড়ি কুমারগাঁও বাসস্টেশনের পাশে বাদে আলী গ্রামে। বাবা শেখ আজিজুর রহমান মাইক্রোবাসচালক। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়। আজিজুর জানান, তিনি যেদিন ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসার খরচ চালাতে সবজি বিক্রি করতে বের হয় সামিউল। মা লুবনা আক্তার জানান, ওই দিন (বুধবার) সামিউলের বাবা গাড়িতে ছিলেন (ভাড়ায়) বলে বাড়ি ফেরেননি। ভোরে টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য সামিউল বের হয়েছিল। সারা দিন ছেলের খোঁজ পাননি তাঁরা। রাতে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় এক কিশোরের লাশ পাওয়ার সূত্র ধরে সামিউলকে শনাক্ত করা হয়। লুবনা বলেন, ‘আমার পুয়া (ছেলে) চোর না। এ কথা সারা এলাকার মানুষ জানে। আমি ছেলে হত্যার উচিত বিচার চাই।’