২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে বারবারিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক জুলহাস উদ্দিনকে।
‘মরার আগে ওগো (আসামিদের) শাস্তি হইছে শুনলে একটু শান্তি পাইতাম।’
জুলহাসের মা নূরজাহান বেগম এই আকুতি জানান। জুলহাস ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাতকুড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে বারবারিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় জুলহাস উদ্দিনকে। জুলহাস বিজয় টেলিভিশনের ধামরাই প্রতিনিধি এবং ধামরাই প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ছিলেন।
গত রোববার জুলহাসের বাড়িতে গিয়ে কথা হয়, তাঁর স্ত্রী কবিতা বেগমের সঙ্গে। কবিতা বলেন, ‘স্বামীর রেখে যাওয়া কয়েক লাখ টাকা এক ব্যবসায়ীকে দিয়েছি। সেখান থেকে লভ্যাংশের টাকা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছি।’
ধামরাই থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জুলহাসকে বারবারিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গলা কেটে হত্যার পরদিন ধামরাই থানায় তাঁর বোন রিনা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন মো. শাহিন, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. আনিস, মো. মামুন ও আবদুল মালেক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সুমা আক্তার নামের এক নারী তাঁর স্বামী ও মামলার আসামি শাহিনকে তালাক দিয়ে আনুমানিক পাঁচ বছর আগে জুলহাসকে বিয়ে করেন। ঘটনার দিন জুলহাস তাঁর ব্যক্তিগত কাজে মানিকগঞ্জ যান। মানিকগঞ্জ থেকে বাসে ফেরার সময় বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে শাহিন অন্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মানিকগঞ্জ থেকে ফিরে ধামরাইয়ের বারবারিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামার পর পেছন থেকে ধারালো চাকু দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জুলহাসের গলায় আঘাত করে চার ইঞ্চি শ্বাসনালি কেটে ফেলেন তাঁরা।
এ সময় মোয়াজ্জেম জাপটে ধরেন জুলহাসকে। জুলহাস জীবন বাঁচাতে দৌড়ে বারবারিয়া বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে তাঁরা ধাওয়া দিয়ে পুনরায় জুলহাসকে আটকে জুলহাসের বুকের ডান ও বাঁ পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় শাহিন ও মোয়াজ্জেম দুজনকে আটক করে পুলিশ। জুলহাসকে দ্রুত মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় মোয়াজ্জেম মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, মামলা দায়েরের পর শাহিন ও মোয়াজ্জেমকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালের শুরুর দিকে মামলার অপর আসামি আনিসকে সাভারের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রিনা বেগম বলেন, ‘আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত আসামি মামুন ও মালেকের নাম বাদ দেওয়ায় আমরা নারাজি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে আর সেটি দেওয়া হয়নি। এখন ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, এটাই চাই।’
ওই সময়ের ধামরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকা জেলা (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন বলেন, আদালতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জুলহাস হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মেহেদি হাসান বলেন, মামলাটি ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। মামলার আসামি আনিস পলাতক, মোয়াজ্জেম জামিনে ও শাহিন কারাগারে।