তায়েবুলের বাড়িতে স্বজনেরা এসে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তায়েবুলের স্ত্রী ও সন্তানদের। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই তাঁদের শান্ত করতে পারছিল না।

স্বামী, মেয়ে ও নাতিকে হারিয়ে আছমা খাতুন পাগলপ্রায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ গ্রামে কবর দেওয়া হয় তায়েবুল হোসেনকে। আগের দিন সোমবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে মেয়ে তাহমিনা ও নাতি তাওহীদকে কবর দেওয়া হয়। পরিবারের তিনজনকে হারানো আছমা খাতুন বিলাপ করে বলছিলেন ‘আমার সব গেল, এহন আমি কী নিয়া বাঁচুম।’
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের গারট্ট গ্রামের তায়েবুল হোসেনের (৫০) স্ত্রী আছমা খাতুন (৪৫)। তাঁদের মেয়ে তাহমিনা বেগমের (২৪) বিয়ে হয়েছিল কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া গ্রামে। ১৪ মাস বয়সের ছেলে তাওহীদকে নিয়ে তাহমিনা বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন কয়েক দিন আগে। গত সোমবার তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। দুপুরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকচালক বাবা তায়েবুল তাহমিনা ও তাঁর সন্তানকে নিয়ে রওনা হন হাতিয়া গ্রামের উদ্দেশে। ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু রেলপথের হাতিয়ায় একটি অরক্ষিত রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় ধাক্কা লাগে ট্রেনের সঙ্গে। এতে ইজিবাইকটি দুমড়েমুচড়ে যায়। নিহত হন তায়েবুল, তাঁর মেয়ে তাহমিনা ও নাতি তাওহীদ।
এ খবর গ্রামে পৌঁছার পর শোকের ছায়া নেমে আসে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সন্ধ্যায় তাহমিনা ও তাঁর ছেলের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় হাতিয়া গ্রামে। সেখানে রাতে শ্বশুরবাড়িতে তাহমিনা ও তাঁর ছেলেকে কবর দেওয়া হয়। রাতেই গারট্ট গ্রামে পৌঁছায় তায়েবুল হোসেনের লাশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধার করে ইজিবাইকটি কিনেছিলেন তায়েবুল। সকাল থেকে সারা দিন এটি চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলত তাঁর সংসার। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে ইসমাইল কলেজে এবং মেয়ে তানজিনা ও কুলসুম স্কুলে পড়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
কবর দেওয়ার পর তায়েবুলের বাড়িতে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা এসে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তায়েবুলের স্ত্রী ও সন্তানদের। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই তাঁদের শান্ত করতে পারছিল না। আছমা খাতুন চিৎকার করে বলছিলেন ‘আমার স্বামী মেয়ে-নাতিকে নিয়া রওনা হলো। আমি বাড়ির বাইরে গিয়া বিদায় দিলাম। এ বিদায় যে শেষ বিদায় হবো, তা কে জানত। আমাগো এহন কী হবো।’
ওই গ্রামের অধিবাসী সেলিম মিয়া জানান, খুবই দরিদ্র এ পরিবার চলত তায়েবুলের উপার্জনে। হঠাৎ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর এদের সামনে এখন অন্ধকার। সরকারিভাবে সাহায্য–সহযোগিতা না পেলে পরিবারটিকে পথে বসতে হবে।
দিঘলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, এ পরিবারকে ইউপির পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য–সহযোগিতা করা যায়, তা করা হবে। এ ছাড়া সরকারি সাহায্য–সহযোগিতা যাতে পেতে পারে, তার জন্যও চেষ্টা করা হবে।