দুই আঞ্চলিক মহাসড়ক

ঠিকাদার কালো তালিকায়, জামানতও বাজেয়াপ্ত

বগুড়া-জয়পুরহাট ও বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের একাংশের কাজ পায় নাভানা কনস্ট্রাকশন। মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ করেনি।

  • ৫ কোটি ২ লাখ টাকার জামানত হারিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

  • জামানতের ১০ শতাংশ বাজেয়াপ্ত হিসেবে ওই টাকা আদায় করেছে বগুড়া সওজ।

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়ার দুই আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজে ধীরগতির কারণে পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকার জামানত হারিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কার্যাদেশ এর আগেই বাতিল করে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়। আদায় করা জামানতের টাকা দুটি সড়কের বেহাল অংশ জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার কাজে ব্যবহার করা হবে।

সড়ক ও জনপথের (সওজ) বগুড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ৮ জুলাই এই টাকা আদায় করা হয়েছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে কাজের অগ্রগতি যাচাই করে প্রায় ৫৫ শতাংশ কাজ বুঝে পাওয়া গেছে। দুই আঞ্চলিক মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটির জামানতের ১০ শতাংশ বাজেয়াপ্ত হিসেবে ওই টাকা আদায় করা হয়েছে।

আঞ্চলিক মহাসড়ক দুটি হলো বগুড়া-জয়পুরহাট এবং বগুড়া-নওগাঁ। দুটি সড়ক খুঁড়ে রেখে সাড়ে তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন। সওজ থেকে গত ৬ জুন কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি পাঠানো হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে। এ ছাড়া দুই সড়কের ইট-কার্পেটিং তুলে, মাটি খুঁড়ে বেহাল করে রাখা অংশে দুর্ভোগ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে এইচবিবি (ইট বিছানো) করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করার কথা।

উত্তরাঞ্চলের চারটি সড়কের মান ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ অঞ্চলে সওজের কোনো দরপত্রে নাভানা যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে চিঠি পাঠানো হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়কের মান ও প্রশস্ততা বাড়ানোর জন্য ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীনে মোকামতলা-জয়পুরহাট ও বগুড়া-নওগাঁ সড়ক ১৮ থেকে ২৪ ফুটে উন্নীত করার জন্য আলাদাভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

বগুড়ার মোকামতলা-জয়পুরহাট মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটার অংশের কাজ পায় মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন। বাকি ১০ কিলোমিটার অংশের কাজ পায় রুহুল আমিন ভূঁইয়া রাইজিং কনস্ট্রাকশন ও প্যারাডাইস ট্রেডার্স নামে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে নাভানা কনস্ট্রাকশন। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। প্রায় কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল অন্য ঠিকাদারেরও।

সওজ সূত্র জানায়, নাভানা কনস্ট্রাকশন মহাসড়কের মোকামতলা থেকে কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশের সম্প্রসারণের জন্য ইট-খোয়া-কার্পেটিং তুলে কাজ শেষ না করেই দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। এসব স্থানে ইট-বালু ফেলে রাখায় যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। পরে কয়েক দফায় কাজ শেষ করার তাগাদা দেওয়া হয়। গত বছরের ২১ জুলাই ২৮ দিন সময় বেঁধে দিয়ে নাভানা কনস্ট্রাকশনকে চিঠি দেয় সওজ। এতে পিপিএ-২০০৮–এর শর্তানুযায়ী, কার্যাদেশ বাতিল ছাড়াও জামানতের ১০ শতাংশ এবং অসমাপ্ত কাজের ১০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ কোটি টাকা আদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর কিছু কাজ করে আবার তা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে নাভানা কনস্ট্রাকশন পায় ৩০ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশ প্রশস্তকরণের কাজ। আর ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় মেসার্স আজিজুল হক ও এম এম বিল্ডার্স নামে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের জানুয়ারি ও মার্চে দেওয়া কার্যাদেশ অনুযায়ী নাভানা কনস্ট্রাকশনের ২০১৯ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে এবং অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। অন্য দুই ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করলেও নাভানা কনস্ট্রাকশন কাজ শেষ করতে পারেনি। এখনো বগুড়ার চারমাথা-গোদারপাড়া থেকে সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশ বেহাল। যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।