দৌলতদিয়ায় ভাঙনে বিলীন আট পরিবারের বসতভিটা, ঝুঁকিতে আরও অনেকে

প্রবল স্রোতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার মজিদ শেখের পাড়ায় নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে মানুষের বসতভিটা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে।
ছবি: এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ১ নম্বর ফেরিঘাটের মাঝামাঝি মজিদ শেখের পাড়ার প্রায় ১০০ মিটার এলাকা মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বসতভিটা হারিয়েছে আটটি পরিবার। ভাঙন–আতঙ্কে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে আরও ৪০টি পরিবার।

এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করে পানির তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটসংলগ্ন মজিদ শেখের পাড়ায় বসতভিটা বিলীন হতে থাকে। কেউ বোঝার আগেই চোখের পলকে একে একে নিচ থেকে দেবে যায় বসতভিটা। এতে ইমান আলী শেখ, আবদুস সামাদ ব্যাপারী, বিলাস ব্যাপারী, আক্কাছ ব্যাপারী, সোবহান শেখ, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য উজ্জ্বল হোসেন ও আক্কেল ব্যাপারীর বসতঘর-ভিটা সব বিলীন হয়ে যায়। অনেকে ঘরের কোনো জিনিসপত্র কিছুই বের করতে পারেননি।

ভাঙন–আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন মোকসেদ মুন্সী, দেলোয়ার প্রামাণিক, টুকাই ব্যাপারী, লতিফ ব্যাপারী, আবদুল ওহাব, মজিবর প্রামাণিক, টোকন মণ্ডলসহ প্রায় ৪০টি পরিবার। ভাঙন–আতঙ্কে রয়েছে মজিদ শেখের পাড়া, সিদ্দিক কাজী পাড়া ও ছাত্তার মেম্বার পাড়ার আরও প্রায় এক হাজার পরিবার।

এর আগে গতকাল সোমবার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে আসেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। এ সময় তিনি লঞ্চঘাটসহ দৌলতদিয়ার ১, ২, ৩ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট ভাঙনঝুঁকির কথা বলেন। এর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ফেরিঘাট এলাকায় ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা গেল।

ভাঙনের জন্য স্থানীয় গ্রামবাসী রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএকে দোষারোপ করছেন। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই স্থানীয় লোকজনের বসতভিটা হারাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি খারাপ দেখছি। তখন থেকে পাউবো, বিআইডব্লিউটিএকে বারবার বলছি। তারা যদি আগে থেকে সক্রিয় থাকত, তাহলে আজ এমন পরিস্থিতি হতো না।
মোস্তফা মুন্সী, চেয়ারম্যান, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ

ভাঙনে নিজের ঘর বিলীন হয়েছে, অন্যের ঘর রক্ষা করতে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। কাউকে বাঁচাতে পারলাম না। কতবার পাউবোকে বললাম বালুর বস্তা ফেলতে, কোনো কথাই শুনলেন না।’

স্থানীয় ইমান আলী শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা খালি শুনে আসছি নদী শাসন হবে। কবে নদী শাসন হবে, তার হিসাব নাই। অহন পানি বাড়লে বিআইডব্লিউটিএ কিছু বস্তা ফেলে। ভালো করে ফেলতে বললে তাঁরা বলেন পাউবো বস্তা ফেলবেন। কে ফেলবেন, জানি না। তাদের ঠেলাঠেলিতে আমাগোর দফা সারা।’

স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আশরাফ হোসেন বলেন, মুহূর্তের মধ্যে ভাঙনে আটটি পরিবারের বসতভিটা নদীতে চলে গেছে। আরও ৪১টি পরিবার অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি খারাপ দেখছি। তখন থেকে পাউবো, বিআইডব্লিউটিএকে বারবার বলছি। তারা যদি আগে থেকে সক্রিয় থাকত, তাহলে আজ এমন পরিস্থিতি হতো না। এখানে বালুর বস্তা না ফেলে উজানে ফেলার অনুরোধ করছি।’

ভাঙনে নদীতে বিলীন হওয়ার আগে ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার মজিদ শেখের পাড়ায়।

বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, গত ২৮ জুন পর্যন্ত ভাঙন এলাকায় সাড়ে ১১ হাজার বস্তা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আজ সকালে লঞ্চঘাট ও ১ নম্বর ফেরিঘাটের মাঝামাঝি এলাকার প্রায় ১০০ মিটার লম্বা ও ৪০ মিটারের মতো ইউটার্ন করে নদীতে বিলীন হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এ মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে আগে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। ভাঙন প্রতিরোধে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

এদিকে বেলা দুইটার দিকে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ কাজী কেরামত আলী। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে ঘাটের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম। এখন তো সেই দুর্ঘটনা ঘটেই গেল। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এখনই তাদের অবগত করছি।’