বাগেরহাটের সড়ক

নতুন গাছের নামে মরা চারা রোপণ

সড়কের পাশে লাগানো হচ্ছে গাছের চারা। তবে তার অধিকাংশ গাছই শুকিয়ে গেছে।
 প্রথম আলো

সড়ক সম্প্রসারণের সময় কাটা হয়েছিল কয়েক শ গাছ। নিয়ম অনুযায়ী, কাজ শেষে সড়কের দুই পাশে লাগানোর কথা নতুন গাছ। সেই কাজও শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নতুন গাছের নামে লাগানো হচ্ছে মৃত গাছের চারা। এ চিত্র বাগেরহাট-পিরোজপুর সড়কের।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বৃক্ষ পালন বিভাগ থেকে কাজ পেয়ে গত সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কে চারা লাগানো শুরু করে। এরই মধ্যে তারা প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের পাশে আকাশমণিগাছের কয়েক হাজার চারা লাগিয়েছে।

লাগানো এসব চারার অধিকাংশই মৃত। সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। আর যেসব চারার কিছু পাতা এখনো সবুজ আছে, তারও অধিকাংশই বাঁচবে না বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। তবে সওজের বৃক্ষ পালন বিভাগ ও কর্মরত ঠিকাদারের কর্মীদের দাবি, এসব গাছ মরবে না। মারা গেলেও তা আবার নতুন করে লাগিয়ে দেওয়া হবে।

বাগেরহাটের নওয়াপাড়া থেকে পিরোজপুরের বলেশ্বর নদের পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ৩৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার মহাসড়ক। এর মধ্যে ২৭ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে গাছের চারা লাগানোর কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। গত ১৬ জুন সওজের বৃক্ষ পালন বিভাগ থেকে গাছ লাগাতে ৭১ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

চারা রোপণ ছাড়াও এই গাছগুলোকে আগামী দুই বছর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রতি কিলোমিটারে ২ হাজার করে মোট ৫৪ হাজার বনজ ও ঔষধি গাছের চারা লাগাতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে।

গত শনিবার দুপুরে ওই সড়কের শিবপুর এলাকায় গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের গাছ লাগাতে দেখা যায়। বিভিন্ন প্রকার বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর কথা থাকলেও সেখানে আকাশমণি ছাড়া অন্য কোনো প্রজাতির গাছের চারা ছিল না। অধিকাংশ চারাগাছে পাতা নেই। কিছু চারার পাতা শুকিয়ে ধূসর কালো হয়ে গেছে। পরিষ্কার না করে ঝোপঝাড়ের মধ্যেও মাটিতে সামান্য গর্ত করে রোপণ করা হচ্ছে শুকনা সেই চারা। পরে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে সেসব চারা বেঁধে দিচ্ছেন শ্রমিকেরা।

মৃত চারা কেন লাগাচ্ছেন, জানতে চাইলে সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা বলেন, ‘যে চারা দেওয়া হয়েছে, তা-ই লাগাচ্ছি। সব চারা মৃত না।’ তাঁদের সঙ্গে কথা ও ছবি তোলার ফাঁকে ভ্যানে চড়ে এসে নামেন এক ব্যক্তি। নিজেকে ‘ঠিকাদারের হয়ে কাজ তুলে দিচ্ছেন’ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এই শুকনা চারার ছবি কেন তুলছেন? ভালো চারা এনে দিচ্ছি। সেগুলোর ছবি তোলেন।’ তবে তিনি তাঁর নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হননি।

পাশের একটি ওয়ার্কশপ থেকে এনামুল ইসলাম নামের এক তরুণ এসে তাঁদের অনুরোধ করেন, এখানে একটা ভালো চারা লাগান। মরা গাছটা এখানে দেবেন না। জানতে চাইলে এনামুল বলেন, ‘এখানে যে গাছগুলো লাগানো হইছে, অধিকাংশই মরা। একটাও জিতা গাছ দেখতিছি না।’

সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কথা হয় ফতেপুর গ্রামের ভ্যানচালক জাহির হোসেনের সঙ্গে। ভ্যান থেকে নেমে কয়েকটি গাছ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্যাখেন কোন গাছটা ভালো। সবগুলো শুকনা, মরা গাছ। জেতা হলে তো শুকনা কাঠ হয়ে যাবে না। পুরা রাস্তায় এমন মরা গাছ লাগাইছে। এ দিয়ে কী হবে!’

বাগেরহাট থেকে পিরোজপুরের দিকে আরও কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ে রাস্তার দুই পাশে সব শুকনা চারার সারি। মাঝে কয়েক জায়গায় দু-একটি সবুজ পাতার ছোট চারার দেখা মিলছিল বেশ দূরে দূরে।

স্থানীয়দের এসব অভিযোগের বিষয়ে সড়ক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, পাতা ঝরিয়েই গাছগুলো লাগানোর নিয়ম। আপাতদৃষ্টে পাতা নেই বলে মৃত মনে হলেও কিছুদিন পর নতুন করে পাতা গজাবে।

সওজ খুলনা কার্যালয়ের বৃক্ষ পালন বিভাগের সহকারী বৃক্ষ পালনবিদ গোবিন্দ গাইন বলেন, এখানে ২৭ কিলোমিটার সড়কের পাশে বিভিন্ন বনজ এবং ঔষধি গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রতিটি গাছের চারার পরিবহন ও রোপণ খরচ ধরা হয়েছে ২৬ টাকা। বাকি টাকা ব্যয় হবে আগামী দুই বছর এই গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজে।

মৃত গাছের বিষয়ে গোবিন্দ গাইন বলেন, এগুলো হার্ডেনিং করা গাছ, পাতা ঝরানো। কোনো চারা মৃত নয়। তারপরও কোনো গাছ যদি মারা যায়, ঠিকাদার সেই গাছ আগামী মৌসুমে পুনঃস্থাপন করবেন। তা না হলে তাঁদের অর্থ ছাড় করা হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে গোবিন্দ গাইন আরও বলেন, আকাশমণিগাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। কেবল ইউক্যালিপটাস কাছ উপকারী নয়। ওই গাছ নিষিদ্ধ। আকাশমণিগাছ লাগানো যাবে।