পারাপারের জন্য বাংলাবাজার ঘাটে আটকা চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, দুর্ভোগ

ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় আটকা পড়েছে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক। মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল থেকে মালবাহী ট্রাকে খাদ্যপণ্য নিয়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে এসেছেন ট্রাকচালক ওমর ফারুক (৪৫)। পারাপারের জন্য গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনি টার্মিনালে আটকা। ফেরিতে উঠার শত চেষ্টা করেও তিনি এখন পর্যন্ত জানেন না কখন ফেরিতে উঠতে পারবেন। ওমর ফারুক জানালেন, ‘ফেরিতে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও যাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লোড নেওয়া হয়। প্রতিটি ফেরিতে কখনো একটা বা বড়জোর দুইটা ট্রাক লোড নেয়, আবার কখনো নেয় না।’

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি পারাপারে এসে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ওমর ফারুকের মতো চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের চালক বাংলাবাজার ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়েছেন। এসব ট্রাকের বেশির ভাগই ৫ থেকে ৭ দিন আগে এসেছে। ঘাটে আটকা পড়ায় তাঁরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় নৌপথের সবধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে চলাচলরত ফেরিতে ভারী যানবাহন না নিতে নির্দেশনা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, টার্মিনালে আসা ট্রাকগুলো অন্য পথে না গেলে তাদের ধীরে ধীরে পার করা হবে। নতুন করে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক ঘাট এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিসি ঘাট সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নামে একটি রো রো ফেরি বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া যাওয়া পথে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এরপর থেকে এই নৌপথে চলাচলরত ৪টি রো রো ফেরি বন্ধ রাখা হয়। এর আগে ছোট–বড় মিলিয়ে এই নৌপথে ১০টি ফেরি চলাচল করত। তবে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ফেরির সংখ্যা কমিয়ে ছয়টি করা হয়েছে।ফেরির সংখ্যা খুবই সীমিত করায় ঘাটে পারাপারের জন্য আসা সবধরনের যানবাহনের চালকেরা ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুব অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এই নৌরুটে ভারী ট্রাক পারাপার বন্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। তাই আমরা আটকা পড়া ট্রাকগুলো অন্য পথে যাওয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু ট্রাকচালকেরা এটা মানতে চাইছেন না। তাঁরা এখানে পড়ে থাকলে তাঁদের দুর্ভোগ বাড়া ছাড়া কমবে না।’

মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, বাংলাবাজার ঘাটের দুটি টার্মিনাল ভর্তি পণ্যবাহী ট্রাক। এই ট্রাকগুলোর মধ্যে অনেকেই ৫ থেকে ৭ দিন আগে থেকে এসে পারাপারের জন্য এখানে অপেক্ষা করছেন। ট্রাকের মধ্যেই তাঁদের খাওয়াদাওয়া থেকে ঘুম—সবকিছু করতে হচ্ছে। করোনার মধ্যে খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় তাঁরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই ট্রাকের নিচে মাদুর পেতে রান্না করছেন। অনেকেই আবার দূর থেকে খাবার সংগ্রহ করে কোনো রকম দিন কাটাচ্ছেন।

মোহাম্মদ খোকন (৬০) নামের পণ্যবাহী ট্রাকচালক বলেন, তিনি গত শুক্রবার ঘাটে এসেছেন। হঠাৎ ঘাটের লোকেরা বলছেন, তাঁদের পার করবেন না। এখন উল্টো ডাবল খরচ দিয়ে অন্য পথে যেতে বলেন। এই ক্ষতির টাকা কে দেবেন? এখান থেকে কেউ কোথাও যাবেন না।

খুলনা থেকে আরেক চালক ইলিয়াস ফরিক বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে কাঁচামালের ট্রাক ফেরিতে লোড নিচ্ছে। আমার ট্রাকেও তো চাল। এটাও খাবার। তাহলে কেন আমার ট্রাক ফেরিতে তুলবে না? আমার যেতে হবে মুন্সিগঞ্জ। অন্য পথে গেলে হিসাব মিলবে না।’

বাংলাবাজার ঘাটের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামালউদ্দিন বলেন, ফেরি চলাচল আরও সীমিত হওয়ায় এখন গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাকগুলোকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আটকা পড়া ট্রাকগুলো না গেলে টার্মিনাল থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। তাদের ধীরে ধীরে ফেরিতে লোড নেওয়া হবে। তবে নতুন করে কোনো ট্রাক বা ভারী যানবাহন ঘাটে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।