রংপুরের স্কুল, কলেজপড়ুয়া দুই বোন বাড়িতে বাজারের ব্যাগ তৈরি করে তা বিক্রি করছে। মাসে আয় ১০ হাজার টাকা।

রংপুরের বদরগঞ্জের বালাপাড়া ইসলামপুর গ্রামের দুই বোন মারিয়া আক্তার ও মারুফা আক্তার। দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় বাড়িতে অলস সময় কাটছিল তাদের। একদিন পাশের গ্রামে ঘুরতে গিয়ে ছোট বোন মারিয়া দেখে, সেখানে কয়েকজন নারী প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে বাজারের ব্যাগ তৈরি করে আয় করছেন। বাড়িতে ফিরে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে মারিয়া ব্যাগ তৈরি শিখতে সেখানে যায়। মাস তিনেক ব্যাগ তৈরি করে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা রোজগারও হয় তার।
ওই টাকা দিয়ে মারিয়া নিজেই কেনে একটি পুরোনো সেলাই মেশিন। শুরু করে বাড়িতে বসে ব্যাগ তৈরি। বড় বোন মারুফাকেও সেই কৌশল শেখায়। এখন বাড়িতে বসেই ব্যাগ তৈরি করে প্রতি মাসে তারা ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি দুই বোন স্বপ্ন দেখছে উদ্যোক্তা হওয়ার।
মারিয়া আক্তার দশম শ্রেণিতে আর মারুফা গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন। পরিবারে আছেন বাবা, মা ও ছোট ভাই। বাবা আবদুল মালেক রিকশাভ্যান চালান। মা মনিরা বেগম গৃহিণী। গত বছর তিনটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন আবদুল মালেক। কিস্তি পরিশোধ করতে প্রতি সপ্তাহে আয়ের বড় অংশই চলে যায় তাঁর। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় নিজেরা কাজের উদ্যোগ নেয় মারিয়া ও মারুফা।
মারুফা আক্তার বলেন, ‘করোনার সময়ে বাবার রোজগার কমে যাওয়ায় সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। আমরা দুই বোন সংসারের বোঝা হতে চাই না। এখন সাহস পাই ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার।’
প্লাস্টিকের বস্তা কিনে সেগুলো দিয়ে বাজারের ব্যাগ তৈরি করে মারিয়ারা। মা মনিরা বেগম বিভিন্ন গ্রাম থেকে পশুখাদ্যের বস্তা সংগ্রহ করেন। প্রতিটি বস্তা কেনেন ৩-৪ টাকায়। একেকটি বস্তা দিয়ে দুটি ব্যাগ তৈরি করা যায়। প্রতিটি ব্যাগ ৮ টাকায় বাড়ি থেকে কিনে পাইকারেরা দোকানে বিক্রি করেন ১০ টাকায়। দোকানি বেচেন ১৫ টাকায়।
মারিয়া জানায়, তারা দুই বোন। সেলাই মেশিন একটা। একজন কাজ করলে আরেকজনকে বসে থাকতে হয়। একটা সেলাই মেশিনে প্রতিদিন ৫০টি ব্যাগ তৈরি করা যায়। সকালে পড়াশোনা শেষে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে প্রতিদিন ৩৫-৪০টি ব্যাগ তৈরি করা যায়। আয়ের টাকার পুরোটাই বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সে টাকায় তাঁর বাবা প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তি দেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
মারিয়া জানায়, বস্তা নির্দিষ্ট আকারে কেটে মেশিনে সেলাই করা হয়। প্রতিদিন অন্তত ২০০টি ব্যাগ তৈরি করা সম্ভব।
ব্যাগের পাইকারি ক্রেতা মানিকুল ইসলাম বলেন, দুই শিক্ষার্থীর তৈরি ব্যাগ টেকসই ও মজবুত। তাতে ২০ কেজি ওজন সহজেই বহন করা যায়। রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুই শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে না থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যাগ বানিয়ে অভাবের সংসারে অবদান রাখছে। তিনি তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।