Thank you for trying Sticky AMP!!

বাদীর দেওয়া এজাহার পরিবর্তন, পুঠিয়ার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে মামলা

পুলিশ পরিদর্শক সাকিল উদ্দীন আহমেদ

এজাহার পরিবর্তন করার অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দীন আহমেদের (৪৮) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বাদী হয়ে আজ রোববার মামলাটি করেন।

পুলিশ পরিদর্শক সাকিল উদ্দীন আহমেদ বর্তমানে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত আছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। এজাহার পরিবর্তনের বিষয়টি ধরা পড়ার পর ওসি সাকিলকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।

দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নূরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি পুঠিয়া থানার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে তিনি আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সর্বোচ্চ ভোট পান। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ফল পরিবর্তন করে আবদুর রহমান ওরফে পটোল নামের এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে। এ নিয়ে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ তিনজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর থেকে আবদুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা নূরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে নূরুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।

হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর ওসি সাকিলকে অভিযুক্ত করে একটি রায় দেন। সাকিল উদ্দীন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০২০ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট তাঁর আপিলটি খারিজ করে দুদককে নিয়মিত মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেন।

পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটায় নূরুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। এ নিয়ে সেদিনই তাঁর মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসিকে একটি এজাহার দেন। সেই এজাহারে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুঠিয়ার ওসির অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ কারণে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ড না করে নিগার সুলতানাকে তা সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করেন। তখন ওসি এজাহারটি গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাঁকে চলে যেতে বলেন।

পরবর্তী সময়ে নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা থেকে এজাহার ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি সংগ্রহ করে দেখেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের নাম-ঠিকানা লেখার কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লেখা আছে। আবার তাঁর উল্লেখ করা আটজন আসামির পরিবর্তে সেখানে ছয়জনের নাম রয়েছে। অথচ তিনি পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ আটজনকে আসামি করেছিলেন। ওসি সাকিল এসব পরিবর্তন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

নিগার সুলতানা এই বিতর্কিত এজাহারের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তালুকদার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ওসির কারসাজির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। এর ভিত্তিতে হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর ওসি সাকিলকে অভিযুক্ত করে একটি রায় দেন। সাকিল উদ্দীন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

সাকিল উদ্দীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে এসব অপরাধের সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

২০২০ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট তাঁর আপিলটি খারিজ করে দুদককে নিয়মিত মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করে সদর দপ্তরে নথি পাঠান। ১৮ জানুয়ারি সদর দপ্তর থেকে মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ওসির বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওসি সাকিলের এজাহার পরিবর্তনের বিষয়টি পুলিশ রেজল্যুশন অব বেঙ্গলের প্রবিধান ২৪৩ ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি দণ্ডবিধির ১৬৬/১৬৭/২১৭/২১৮ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হলো। মামলার তদন্তকালে এসব অপরাধের সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।