বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মেঘনা নদীর তীর দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এতে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর মৌজায়।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মেঘনা নদীর তীর দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এতে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর মৌজায়।

মেঘনায় অবৈধ দখল

বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনা সরানোর নির্দেশ

মেঘনা নদীর জায়গা দখল করে বালু ভরাট করেছে এপিএসসিএল। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) মেঘনা নদীর তীরভূমি দখল করে প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণ ও বালু ভরাট করেছে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। ভরাট করা অবৈধ স্থাপনা নিজেদের খরচে সরিয়ে নিতে গত ২২ জুন এপিএসসিএলকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। আর দখলকৃত জমিকে ১ নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

কিন্তু এপিএসসিএল এখনো জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো মেঘনার তীরের আরও প্রায় তিন-চার একর জায়গা নতুন করে দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এপিএসসিএল অবৈধভাবে ভরাটকৃত বালু-স্থাপনা সরিয়ে না নিলে জেলা প্রশাসন, পাউবো, বিআইডব্লিউটিএ ও আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে মেঘনা ভরাট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপ্রধান (হাইড্রোলজিস্ট) মো. সফি উল্লাহর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘লকডাউনের জন্য আমরা কিছু করতে পারছি না।’ নতুন করে বালু ভরাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাতের আঁধারে তাঁরা বালু ভরাট করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে বালু ভরাট বন্ধ করেছি।’

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এপিএসসিএল বি-টাইপ আবাসিক এলাকার জন্য উপজেলার সোনারামপুর ও সোহাগপুর মৌজায় মেঘনা নদীর গর্ভ ও তীরভূমি অবৈধভাবে বালু দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সোহাগপুর মৌজায় বিএস মানচিত্র অনুযায়ী, এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ নদীর ১০ ফুট ভেতরে ঢুকে বালু দিয়ে ভরাট করেছে। এপিএসসিএল মেঘনা নদীসংলগ্ন যে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করেছে, তা সম্পূর্ণরূপে নদীর জায়গা। এ ছাড়া সিএস মানচিত্র অনুযায়ী, ওই মৌজার ৩৫৯ দাগের ৩০ শতক নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। ভরাট অব্যাহত রাখার কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, এপিএসসিএলের আবাসিক এলাকার সীমানাপ্রাচীরের বাইরের উত্তর-পূর্ব দিকের মেঘনার তীর বেড় দিয়ে প্রায় তিন থেকে চার একর জায়গা দখল করে নতুন করে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তদন্ত দল পরিদর্শনের সময় জায়গাটি দখলমুক্ত ছিল। তদন্ত দল পরিদর্শনের পরপরই বেড়া দিয়ে মেঘনার তীর বালু ভরাট করে দখল করেছে এপিএসসিএল।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, চারটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে জেলা প্রশাসনের ভূমিকাই মুখ্য।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মেঘনাতীরে রাখা হয়েছে ভারী যন্ত্রাংশ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এপিএসসিএল মেঘনার তীরভূমি ভরাট করে নির্মাণ কার্যক্রমের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র এবং ভরাটের আগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পাউবো, পরিবেশ ও বিআইডব্লিউটিএর কোনো অনুমতি নেয়নি। আর বাংলাদেশ পানি বিধিমালা ২০১৮–এর বিধি ৩৭ এর উপবিধি ১-৫ অনুসারে বন্যার পানির প্রবাহ অঞ্চলে কোনো স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। স্থানটিকে বন্যানিয়ন্ত্রণ অঞ্চল ঘোষণার জন্য জেলা পাউবোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে কমিশন।

এপিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন পেয়েছি।’ বালু-স্থাপনা অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা অপসারণ করব। একটু সময় লাগবে।’ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তদন্ত দল পরিদর্শনের পর নতুন করে মেঘনার তীর দখল করে বালু ভরাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে হবে।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন মেপে পেয়েছে যে এপিএসসিএলের বালু ভরাট ও স্থাপনা নদীর ১০ ফুটের মধ্যে পড়েছে। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানা হলেও নদীর প্লাবনভূমি ভরাট করা যাবে না এবং ভরাটকৃত বালু অপসারণ করতে নদী রক্ষা কমিশন নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা আদেশ না মানলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।