Thank you for trying Sticky AMP!!

অবরোধ-ধর্মঘটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি পথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজ শনিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়

শিক্ষার্থীদের অবরোধ স্থগিত, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অবরোধ স্থগিত করা হয়। তবে ওই হামলার ঘটনায় দায়ের  করা মামলায় দুই পরিবহনশ্রমিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ রুটে বাস ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন বাস মালিক-শ্রমিকেরা।

বাস মালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, দুই শ্রমিককে নিঃশর্ত মুক্তি, গাড়ি পোড়ানো ও কাউন্টার ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা না নিলে ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন তাঁরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে শনিবার সকাল থেকে পুনরায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাস মালিক-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবরোধ-ধর্মঘটে  বরিশাল থেকে দক্ষিণের পাঁচ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি পথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব পথের যাত্রীরা। তবে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাঁদের অবরোধ কর্মসূচি এক দিনের জন্য স্থগিত করলেও বাস মালিক-শ্রমিকেরা সন্ধ্যা সাতটা অবধি ধর্মঘট প্রত্যাহার করেননি। তাঁরা রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এর ফলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।

দুপক্ষের আন্দোলনে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দিনভর কয়েক হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিকেলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের টানা চতুর্থ দিনের আন্দোলনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ। এতে সকাল থেকে মহাসড়কে আটকা পড়ে দক্ষিণের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার অসংখ্য যানবাহন। সকাল থেকে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে এবং বাঁশ, বেঞ্চ ও কাঠের তক্তা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে বাধা পেয়ে যানবাহন থেকে নেমে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন। দফায় দফায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন  যাত্রীরা। এ ছাড়াও টানা তিন দিনের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশে আসা পর্যটকেরাও পড়েছেন বিপাকে।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশে এসেছেন চাকরিজীবী পরিমল চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে কুয়াকাটা যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলছে। এখন কী করব, বুঝতে পারছি না।’ শান্তা ইসলাম নামের আটকে পড়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমিও একজন শিক্ষার্থী। এখানে এসে শুনেছি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিচার আমিও চাই। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হোক, এটা একেবারেই কাম্য নয়।’ সাদ্দাম হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধান না হলে ভোগান্তি বাড়বে।’

বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা

অপর দিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় তাঁদের সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং টায়ার জ্বালাতে দেখা যায়। রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে অসংখ্য যাত্রীকে অসহায় হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

শহিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী পরিবার নিয়ে পাথরঘাটায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসস্ট্যান্ডে এসে শোনেন, বাস চলাচল বন্ধ। দুই দিন আগে চিকিৎসার জন্য তিনি স্ত্রী, ছোট দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে বরিশালে এসেছিলেন। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘বিকল্প কোনো যানবাহনও নেই, জানি না কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাব।’ বরগুনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা অলিউল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে শুক্রবার বরিশালে এসে এখন আটকে গেছি। কখন ধর্মঘট শেষ হবে আর কখন বাড়ি যেতে পারব, কিছুই জানি না।’

রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন কয়েক হাজার যাত্রীকে গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
রূপাতলী মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ আছে। আমাদের নিরীহ দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় ধর্মঘট চলবে।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে এক ছাত্রীসহ দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এক বাসশ্রমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর জের ধরে ওই দিন রাত একটার দিকে রূপাতলী হাউজিং এলাকার মেসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পরিবহনশ্রমিকদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক কাওসার হোসেনের নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়।

তিন দফা দাবিতে শনিবার সকাল থেকে পুনরায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

কাওসার হোসেন অবশ্য এই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। তিনি গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আমাদের দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো লোক ছাত্রদের ওপর হামলা চালাননি। আমরাও ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। গত মঙ্গলবার দুপুরে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে বিআরটিসির বাস স্টাফদের। এরপর ওই দিন গভীর রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় পুনরায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। কারা হামলা করেছে, আমরা জানি না। তবে আমাদের কোনো শ্রমিক এতে জড়িত নন। দুই শ্রমিককে মুক্তি না দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলবে।’

প্রশাসনের উদ্যোগ

শনিবার বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোক্তার হোসেন, বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রাসেল, ওসি মো. নুরূল ইসলাম, বন্দর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন, শিক্ষক, ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে তাঁরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান এবং তাঁদের সব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা গত মঙ্গলবার গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার সঙ্গে জড়িতদের আসামি করে মামলা এবং তাঁদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অমিত হাসান বলেন, ‘আমাদের তিন দফা দাবির কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু মূল দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ জন্য আমরা সেসব দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া মহান মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক দিনের জন্য আমাদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে নিয়মতান্ত্রিক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে।’

বৈঠক শেষে পুলিশের উপকমিশনার মোক্তার হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা হামলায় জড়িত দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। আশা করি বিষয়টি সমাধান হবে।’

উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর বেশ কিছু বাস্তবায়নের বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে। আরও হবে।’ এ জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।

Also Read: শ্রমিকদের ধর্মঘট আর শিক্ষার্থীদের অবরোধে বন্ধ ২১ রুটের বাস, যাত্রীদের ভোগান্তি