
শিক্ষার্থীদের বাকি খাইয়ে প্রায় পথে বসা মানিক হোসেন ওরফে বাবু বকেয়ার টাকা তুলতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ দোকানের আশপাশেই থাকছেন। শিক্ষার্থীদের কেউ যদি বাকির টাকা পরিশোধ করতে আসেন, তাই তাঁর এ অপেক্ষা। দোকানের পাশে বসে খাতা উল্টেপাল্টে তিনি বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের ফোন দিচ্ছেন। তবে তেমন সাড়া পাচ্ছেন না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে একটি খাবারের দোকান চালাতেন মো. মানিক হোসেন (৩৩)। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ‘বাবু ভাই’ বলে ডাকেন। বাজারের টাকা না থাকায় নিরুপায় হয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল সোমবার প্রথম আলোয় ‘বাকি দিয়ে “বাবু ভাই”য়ের ব্যবসা লাটে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দোকান বন্ধ হলেও দেনাদারদের অপেক্ষায় থাকছেন তিনি।
মানিক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ টাকাও দিচ্ছে না। ফোনও দিচ্ছে না। আমি ফোন দিলে কেউ কথা বলে, কেউ কেটে দেয়। তারা বলেই যাচ্ছে শিগগির টাকা দেবে। কিন্তু দেয় না। সকাল থেকে দোকানের পাশে বসে আছি। যদি কেউ টাকা দেয় এই আশায়। নিজের তো চলার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু কেউই যোগাযোগ করছে না। শুধু সাংবাদিকেরাই খোঁজখবর নিচ্ছে।’
মানিক বলতে থাকেন, ‘আমার চলা কঠিন হয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এটা বুঝছে না। পাশের একটা দোকান থেকে টাকাপয়সা ধার নিয়ে চাল–ডাল কিনে সংসার চালাচ্ছি। মুদিখানায় কয়েক লাখ টাকা বাকি পড়ে আছে। তারাও চাপ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা টাকা পরিশোধ করলে দোকান খুলতে চাই।’
এর আগে মানিক বলেছিলেন, ‘ছেলেপেলে বাকি খেয়ে টাকাপয়সা দিচ্ছে না। প্রায় আড়াই লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এখন ক্যাশপাতি নাই, একেবারে শেষ হয়ে গেছে। বাজার করার টাকা নাই। যে দোকান থেকে বাকিতে জিনিস কিনতাম, তারা আর বাকি দিচ্ছে না। এ জন্য দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে দুই মাস ধরে কমিটি কমিটি করে ম্যালা টাকা বাকি রেখেছে। অন্য শিক্ষার্থীরাও খালি বাকি খায়।’
মানিক ২০০০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের দোকান চালান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হলের ডাইনিং-ক্যানটিনের বাইরে মানিকের দোকানে খেয়ে থাকেন। মানিকের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তাঁর দোকানে ১০ থেকে ১২ জন কাজ করতেন। দোকান বন্ধ হওয়ায় তাঁরাও কাজ হারিয়েছেন। এর আগে মানিকের দোকান থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতা মাসিক চাঁদা তুলতেন। চলতি বছর জানাজানির পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর বাকি খাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁরা দ্রুতই টাকা দিয়ে দেবেন। ‘বাবু ভাই’কে তাঁরা বিপদে ফেলবেন না। একটু সময় লাগবে। পত্রিকায় তাঁদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।