Thank you for trying Sticky AMP!!

মধ্যরাতে মাস্ক-হেলমেট পরা অস্ত্রধারীরা হামলা করে নিয়ন্ত্রণ নিল দুটি হলের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার দিবাগত রাতে মাস্ক ও হেলমেট পরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ হামলা চালিয়ে দুটি আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ নেয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল শনিবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি পক্ষ মাস্ক ও হেলমেট পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল ও বঙ্গবন্ধু হলে হানা দেয়। ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে চালানো এ হামলায় হলের নিয়ন্ত্রণে থাকা পক্ষটির ১০ জন আহত হয়েছেন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরসাইকেল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও একাধিক পক্ষ ক্যাম্পাসে সক্রিয় আছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব পক্ষ প্রায়ই সংঘাতে জড়াচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত চারটি বড় ধরনের সংঘাত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রাতের ঘটনা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ ঘটনার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী, বিশেষ করে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে যে পক্ষটি হামলা চালাতে হলে ঢুকেছিল, তারা বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ সময় তারাই ক্যাম্পাসের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জিতে যাওয়ায় তারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ সময় হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত পক্ষটি। নির্বাচনের দেড় মাসের মধ্যেই গতকাল রাতে মাস্ক-হেলমেট পরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আবার হল পুনরুদ্ধারে আসেন সাদিকপন্থীরা।

Also Read: কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য আছে, চলছে সংঘাত

শের-ই-বাংলা ও বঙ্গবন্ধু হলের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে ৪০ থেকে ৪৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী মাস্ক ও হেলমেট পরে প্রথমে শের-ই-বাংলা হলে প্রবেশ করেন। তাঁরা হলে ঢুকে প্রধান ফটক আটকে দেন এবং বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলোর সিটকিনি লাগিয়ে দেন। এরপর হলের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করেন তাঁরা। তারপর শের-ই-বাংলা হল থেকে বেরিয়ে সরাসরি বঙ্গবন্ধু হলের চতুর্থ তলায় যান তাঁরা। সেখানে জাহিদ ফারুকপন্থী পক্ষটির কয়েক সমর্থককে পিটিয়ে আহত করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা দুটি হলেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।

আহত ছাত্রলীগ কর্মীদের অভিযোগ, সাদিক আবদুল্লাহপন্থী পক্ষের নেতৃত্বে থাকা বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদ, ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের আল সামাদ ওরফে শান্তর নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালিয়েছে।

হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন তাহমিদ জামান। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। তবে গন্ডগোল হচ্ছে এটা শুনেছি। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

এই পক্ষের আরেক নেতা তানজিদ মঞ্জু আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ ময়ীদুর রহমানের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা হয়। এতে আমি হাতে আঘাত পেয়েছি। ময়ীদুর রহমান পিকআপে ইট নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা হামলা করিনি।’

Also Read: শাস্তি না হওয়ায় ছাত্রলীগের সংঘাত থামছে না, অসহায় শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা জানান, হামলার পর জাহিদ ফারুকপন্থী ছাত্রলীগ কর্মী অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়ীদুর রহমান ওরফে বাকির অনুসারীরা প্রতিরোধে এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় অমিত হাসানের একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাত দুইটা পর্যন্ত দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর অমিত ও ময়ীদুরের সমর্থকেরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এর মধ্যে বন্দর ও কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ময়ীদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের অধিকাংশই বিগত দিনে নানা অপরাধে অভিযুক্ত। কিন্তু এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এভাবে হামলা চালানোর সাহস পেয়েছে তারা।’

Also Read: হলের শৌচাগার থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করলেন শিক্ষার্থীরা

বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হরিদাস নাগ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন শান্ত। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো পক্ষ মামলা বা অভিযোগ করেনি। কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, রাতে হামলার বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছিলেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত আছে।