
মা-বাবার সঙ্গে প্রতিবছরই গণিত উৎসবে আসে মেহেজাবিন তাহা (১৪)। ডাচ্–বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২২-এর খুলনা আঞ্চলিক পর্বেও অংশ নিয়েছে দশম শ্রেণির এই ছাত্রী। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছে তাহা। তবে এবারই প্রথম মাকে রেখে তাহা এসেছে। কারণ, তাহার মা সাগরিকা খাতুন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন। রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
তাহা সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তাহার মা সাগরিকা খাতুন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাহার বাবা তাহিয়াতুল হক ব্যবসা করেন। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরা শহরের কাচারিপাড়া এলাকায়।
আজ শুক্রবার সকালে গণিত উৎসবের ভেন্যু খুলনার আযম খান কমার্স কলেজ প্রাঙ্গণে তাহা ও তার বাবার সঙ্গে কথা হয়। তাহা বলে, ‘আমার প্রিয় বিষয় গণিত। মাকে হাসপাতালে রেখে আসতে মন খারাপ লেগেছে। তবে মা-ও চাচ্ছিলেন আমি এখানে অংশ নেই। তাই তাঁর চাওয়াতেই গণিত উৎসবে এসেছি।’
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাহার বাবা তাহিয়াতুল হক। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তাহার মায়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত দেশে ৪৬টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। গত বছরের মে মাসে চিকিৎসার জন্য আমরা তাঁকে ভারতের মুম্বাইয়ে নিয়ে যাই। অক্টোবরে চিকিৎসা শেষে আমরা দেশে ফিরি। পুরো সময় মেয়ে আমাদের সঙ্গেই ছিল। অক্টোবরের ৩০ তারিখ আমরা দেশে আসি। নভেম্বরেই ওর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। দিন-রাত পড়ে তাহা ভালো ফলাফল করেছে। প্রভাতি শাখায় দশম শ্রেণিতে সে প্রথম হয়েছে।’
দুই বছর ধরে দেশ-বিদেশে মায়ের চিকিৎসায় সঙ্গেই আছে তাহা। ঢাকায় মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তাহা অনলাইনে গণিত উৎসবের বাছাইপর্বের পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে আজ খুলনায় এসে তাহা।
তাহিয়াতুল হক বলেন, ‘তাহার মায়ের চিকিৎসার জন্য ডিসেম্বরেই আমাদের আবার ভারত যাওয়ার কথা ছিল। তবে ১৬ ডিসেম্বর হঠাৎ তাঁর খিঁচুনি শুরু হয়। দ্রুত আমরা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে ঢাকায় নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্রেনে ক্যানসারের জীবাণু সংক্রামিত হওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসক। এখন তাঁর রেডিও থেরাপি চলছে। হাসপাতালে মায়ের পাশে থেকেই মেয়েটা আমার অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছিল। বাছাইপর্বে টিকে যাওয়ায় আঞ্চলিক পর্বের জন্য ওকে নিয়ে খুলনায় এসেছি। দুপুরেই আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেব।’
আলাপ শেষে তাহা মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাইল। এর আগে বলল, ‘এই উৎসবে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, মন খুলে প্রশ্ন করা যায়। এখানে অনেক বিজ্ঞ শিক্ষকেরা থাকেন। তাঁদের কাছে গণিত নিয়ে মন খুলে প্রশ্ন করা যায়। অনেক কিছু জানা যায়।’