রূপগঞ্জে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের জেরে পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা, ১০ শ্রমিক আটক

শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করলে যৌথ বাহিনী বাধা দেয়। এ সময় সংঘর্ষ বাধে। বুধবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় তৈরি পোশাক কারখানা রবিনটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার রাত আটটায় কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসক) আদনান শামস প্রথম আলোক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে ১০ শ্রমিককে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সন্ধ্যায় কারখানাটির ফটকে কারখানা বন্ধের ঘোষণা–সংবলিত নোটিশ সাঁটিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশে রবিনটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড এবং একই প্রাঙ্গণে থাকা কম্পটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ৮ এপ্রিল থেকে কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকেরা ‘বেআইনি’ ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কারখানা ভাঙচুর, ক্যানটিন লুটপাটসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর আক্রমণ করেন। ‘বেআইনি ও অযৌক্তিক’ দাবিদাওয়া মানার শর্তে জোরপূর্বক কারখানার কাজ বন্ধ করে এবং কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে আহত করার পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা করে গুরুতরভাবে জখম করেন শ্রমিকেরা। এ অবস্থায় শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ফ্যাক্টরির সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩(১) ধারা অনুযায়ী বেআইনি ধর্মঘটের কারণে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।

দোষী শ্রমিকদের শাস্তি নিশ্চিত করার পর শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কারখানা ফটকে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণায় বলা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। বুধবার দুপুরে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায়

আদনান শামস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এর জেরে সকালে শ্রমিকেরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে কারখানা ভাঙচুর, কর্মকর্তাদের মারধর করেন। কারখানার ভেতরে ভাঙচুর-লুটপাটের পর বাইরে গিয়ে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। আমরা কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছি। রবিনটেক্স ছাড়াও একই প্রাঙ্গণে থাকা কম্পটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড নামের আরও একটি কারখানাও আমরা বন্ধ ঘোষণা করেছি।’

এদিকে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ১০ শ্রমিকের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মো. দাদুল হক (২৪), মো. উজ্জ্বল মিয়া (২৯), সাদ্দাম হোসেন (৩০), আহাদ হোসেন (৩১), রাফি খান (২১), সুমন সরদার (৩০), মো. সুমন হোসেন (২৩), মো. মোজাম্মেল (২১), মো. মনিরুল ইসলাম (২১) ও মো. রাসেল আলী (১৯)।

নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাত সাড়ে আটটায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। আটক শ্রমিকদের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে।