খাল থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ দেখতে মানুষের ভিড়। গত সোমবার সকালে উপজেলার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের মুনিয়া পুকুর এলাকা থেকে তোলা
খাল থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ দেখতে মানুষের ভিড়। গত সোমবার সকালে উপজেলার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের মুনিয়া পুকুর এলাকা থেকে তোলা

হাটহাজারীতে তিন দিনে চার লাশ উদ্ধার, জনমনে আতঙ্ক

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তিন দিনের ব্যবধানে চারজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে এই উপজেলায় প্রকাশ্যে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছিল। পরপর এসব ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

গত সোমবার সকাল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত উপজেলার তিন ইউনিয়ন থেকে লাশ চারটি উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা ও দুটিতে হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, হাটহাজারীতে সোমবার উদ্ধার হয় দুটি লাশ। তাঁদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে একজন তরুণী। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ধলই ইউনিয়নের মুনিয়া পুকুরপাড় এলাকার খাল থেকে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ বুধবার রাতে ফতেয়াবাদ ইউনিয়নের চৌধুরীহাট ঠাণ্ডাছড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরেক বৃদ্ধের লাশ। এ ঘটনায় দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

অক্টোবরেও পরপর চার খুন

এর আগে গত ৭ অক্টোবর হাটহাজারীর মদুনাঘাট এলাকায় চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিমকে (৫২)। এর এক সপ্তাহ পর উপজেলার চৌধুরীহাট এলাকায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় অপু দাশ (৩০) নামের ছাত্রদলের এক নেতাকে। তিনি উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি ছিলেন। একই সময়ে ছুরিকাঘাতে আহত হন ছাত্রদলের কর্মী মুহাম্মদ তামিম (৩২)। তিনিও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২১ অক্টোবর পৌরসভার পাশে নবম শ্রেণির ছাত্র মুহাম্মদ তানভীরকে (১৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্কুলশিক্ষার্থীদের একটি অংশ এতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এক মাসে চারটি লাশ উদ্ধার ও প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। অনেকেই মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। সামনে নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনে এসব ঘটনা বাড়বে।
—লোকমান হাকিম, বাসিন্দা, হাটহাজারী উপজেলা

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

পরপর এসব খুন ও লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বাড়ার পেছনে পুলিশের দায়সারা ভাব ও যথাযথ বিচার না হওয়াকেই দায়ী করছেন বাসিন্দারা। জানতে চাইলে উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের প্রবীণ বাসিন্দা লোকমান হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসে চারটি লাশ উদ্ধার ও প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। অনেকেই মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। সামনে নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনে এসব ঘটনা বাড়বে।

পুলিশের দাবি, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুর কাদের ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি ঘটনায় তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় শনাক্ত ও ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ কাজ করছে।

হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আজিজ বলেন, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। একটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনার যোগসূত্র নেই। সাম্প্রতিক চারটি ঘটনার দুটি হত্যা মামলা ও দুটি অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। অপমৃত্যু দুটিতে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে—একজন পানিতে ডুবে এবং আরেকজন গাড়ির ধাক্কায় মারা গেছেন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশও মাঠে সক্রিয় রয়েছে।