Thank you for trying Sticky AMP!!

বুরুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ফটোসেশনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। শনিবার বিকেলে

প্রথম পুনর্মিলনীতে শৈশবে ফিরলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

আমির হোসেনের বয়স ৭৫ বছর। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। বন্ধুপাগল মানুষটির সময় কাটে এখন অনেকটা একাকিত্বে। তাঁর বয়সের অনেকেই বেঁচে নেই। যে কয়েকজন জীবিত আছেন, তাঁরাও অনেকে ভুগছেন রোগ-শোকে। সেই আমির হোসেন তাঁর বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনীতে এসে দেখা পেয়ে গেলেন এক বাল্যবন্ধুর। ৫০ বছর আগের সেই সহপাঠীকে পেয়ে সে কী আনন্দ তাঁর! কথা বলতে গিয়ে দুজনের কণ্ঠ আবেগে জড়িয়ে আসছিল।

এমন বেশ কয়েকটি দৃশ্য দেখা গেল, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুরুদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে। গতকাল শনিবার বিকেলে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও ব্যবসায়ী এম ডি ফকর উদ্দীন আহমেদ।

১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো এমন অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস একটু বেশিই ছিল। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অনেকেই ফিরে যান স্কুলজীবনে। বিদ্যালয়ের কয়েকজন সাবেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেন, শুরুতে বিদ্যালয়টি টিনের চালার মাত্র দুটি কক্ষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। অজপাড়াগাঁয়ের এই বিদ্যালয়কে বর্তমান অবস্থায় আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

বুরুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়

ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করে বিদ্যালয়ের ১৯৭০ সালের শিক্ষার্থী বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ আকন্দ বলেন, প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের বলে বুরুদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাফল্য একেবারে কম নয়। সরকারি–বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দায়িত্ব পালন করেছেন, করছেন। সবাই এগিয়ে এলে এই বিদ্যালয়কে জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব।

বক্তব্যে ঢাকার পিলখানার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান আকন্দ বলেন, এই বিদ্যালয়ের কাছে তিনি চিরঋণী। এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে শুধু তিনি নন, তাঁর আরও তিন ভাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই বিদ্যালয়ের যেকোনো কাজে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন দেলোয়ার হোসেন (মাসুম), কামরুল হক (জিহান), সামিরা আফরিন, সুবর্ণা আহমেদ, আনিসুর রহমান, কবির আকন্দ, রফিক আকন্দ, রেজায়ের রাব্বী, আল আমীন, আজিজুল হক, হুমায়ুন কবির, জসীম উদ্দীন, রায়হান ভুঁইয়া, মাহবুবুল আলম, মাকসুদুল আলম, দেলোয়ার হোসেন, নাজমুল হক, আসাদুজ্জামান বাদল প্রমুখ।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়

অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এ সময় বিদায়ী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টিতে ৩৫ বছর শিক্ষকতা শেষে আগামী জুন মাসে অবসরে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে এই বিদ্যালয় থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন। অবসরে গেলেও এই বিদ্যালয় হৃদয়ে থাকে যাবে আজীবন।

স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শিক্ষার্থী ও অতিথিদের অভিবাদন জানান বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বিল্পব মোহন চৌধুরী। বক্তব্য দেন শিক্ষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল আকন্দ। প্রধান শিক্ষক মো. হোসেন আলী বলেন, অনেক চেষ্টার পর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনীর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন প্রতিবছর করা যেতে পারে। এতে বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অ্যালামনাই গড়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিদের একাংশ

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকন্দ। সঞ্চালনায় ছিলেন ফারজানা আকন্দ ও মো. আল আমীন।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ ভুঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ ও মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. হাবিব উল্লাহ, শিক্ষানুরাগী আতাউর রহমান আকন্দ। বক্তব্য পর্বের পর ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।