কক্সবাজারে প্রতি শুক্রবার থানা রাস্তার মোড়ে বসে পাখির বাজার। শহরের শৌখিন পাখিপ্রেমীরা ভিড় করেন পাখি কিনতে। গত শুক্রবার বিকেলে
কক্সবাজারে প্রতি শুক্রবার থানা রাস্তার মোড়ে বসে পাখির বাজার। শহরের শৌখিন পাখিপ্রেমীরা ভিড় করেন পাখি কিনতে। গত শুক্রবার বিকেলে

শুক্রবারের পাখির বাজারে ময়ূরপঙ্খি, রেসিং, সার্টিং ঘিরে ভিড়

কক্সবাজার শহরের পৌর ভবনের পাশে ব্যস্ততম থানা রাস্তার মোড়। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এই সড়কের পাশে বসে রকমারি পাখির বাজার। নানা জাতের কবুতর পাওয়া যায় বলে অনেকে বলেন ‘কবুতর বাজার’। জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর, বান্দরবানের লামা, আলীকদম থেকে লোকজন এই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন নানা প্রজাতির পোষা পাখি। বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকার পাখি বিক্রি হয় এই বাজারে। ক্রেতাদের নজর বেশি থাকে ময়ূরপঙ্খি, গোল্ডেন সুইট, রেসিংসহ নানা জাতে কবুতর ও পাখির দিকে।

গত শুক্রবার বিকেলে বাজার ঘুরে দেখা গেল, ময়ূরপঙ্খি, বাজরিগার, রেসিং, কিং, পোটার, মুক্কি, সোয়াচন্দন, গোল্ডেন সুইট, বোখারি, বিউটি বেজার, জালালি, সিরাজিসহ অন্তত ৩০ প্রজাতির কবুতর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মেলা বসেছে। এর মধ্যে কয়েক প্রজাতির কবুতর বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। পোটার জাতের কবুতর প্রতি জোড়া ৫-৬ হাজার টাকা, কিং কবুতর ৬-৭ হাজার টাকা, গোল্ডেন সুইট ২-৩ হাজার টাকা এবং রেসিং, ফেন্সি, গিরিবাজ, সার্টিং কবুতর ৪-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাভবার্ড জোড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ব্ল্যাক ডাভ, ডায়মন্ড ডাভ, কোয়েল, টার্কি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শহরের কলাতলী লাইটহাউস পাড়ার বাসিন্দা মো. রফিক বিক্রির জন্য বাজারে আনেন ১২ প্রজাতির প্রায় ২০০টি কবুতর। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় বিক্রি করেন ১২০টি কবুতর। এর মধ্যে রেসিং কবুতর বিক্রি করেন জোড়া চার হাজার টাকায়। এই কবুতর দিয়ে প্রতিযোগিতা দেওয়া হয়। দুই জোড়া ফেন্সি কবুতর বিক্রি করেন ১১ হাজার টাকায়।

মো. রফিক (৪৫) বলেন, ৯ বছর আগে বাড়িতে শখের বসে কবুতর পালন শুরু করেন। সেই থেকে তিনি প্রতি শুক্রবার এই কবুতর হাটে পোষা পাখি বিক্রি করে আসছেন। বাড়িতে বিক্রির উপযোগী আরও ১৭০টি কবুতর আছে। কবুতরের পাশাপাশি দুই বছর ধরে পাহাড়ি মোরগ ও খরগোশ পালন করছেন। পাহাড়ি মোরগের লড়াই এই অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। পাহাড়ি একটি মোরগ ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুরের হাজিপাড়ার বাসিন্দা নুরুল হক বাজারে বিক্রির জন্য আনেন ১৪ জোড়া জালালি কবুতর। প্রতি জোড়া ২ হাজার টাকা দরে ৮ জোড়া কবুতর বিক্রি করে পেয়েছেন ১৬ হাজার টাকা।

নুরুল হক (৬০) বলেন, কবুতর ঠিকমতো লালন-পালন করা গেলে অল্প পুঁজিতে লাভবান হওয়া যায়। প্রতি মাসে একটি কবুতর থেকে এক জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। প্রতি জোড়া বাচ্চা বিক্রি হয় ৩০০-৪০০ টাকায়।

পাখির হাটে বিক্রির জন্য পাখি। গত শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের থানা রাস্তার মোড়ে

বাজারে ম্যাগপাই জাতের ১৫ জোড়া কবুতর আনেন উখিয়ার সোনারপাড়ার নেজাম উদ্দিন। প্রতি জোড়া বিক্রি করেন ২ হাজার ২০০ টাকায়। বাড়িতে আরও ১ হাজার ৫০০টি কবুতর রয়েছে। কবুতর বিক্রি করে তিনি প্রতিবছর দুই লাখ টাকা আয় করেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলের মোহাম্মদ হাসান নিজের বাড়িতে দেশি-বিদেশি পাখি পালন করেন। ছয় বছর ধরে এই বাজারে পাখি বেচাবিক্রি করে আসছেন। শুক্রবার দুই ঘণ্টায় তিনি চার জোড়া লাভবার্ড, সাত জোড়া রেসিং কবুতর বিক্রি করেন।

হাসান (৩৫) বলেন, সব পাখি তাঁর বাড়ির খামারে জন্মানো। ছয় বছর ধরে পাখির ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ভারী বৃষ্টি শুরু হলে সড়কের উন্মুক্ত বাজারে পাখি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া সপ্তাহে মাত্র একদিন বাজার বসে, তাতে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরের অভ্যন্তরে কোনো একটি জায়গায় পাখির বাজার স্থাপন করে দিলে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ব্যবসার সুযোগ হতো। তখন বেকার তরুণ-যুবকেরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেতেন।

পাখির হাটে বিক্রির জন্য পাখি। গত শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের থানা রাস্তার মোড়ে

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনজুর আলম দেড় হাজার টাকায় কিনেছেন এক জোড়া লাভবার্ড। সন্তানদের জন্য পাখিগোরো কিনেছেন তিনি। শিশুরা পাখির সঙ্গে খেলবে—এমন ভাবনা কাজ করেছিল।

বাজারে পাখি কিনতে আসেন রামুর স্কুলশিক্ষক কামরুল হাসান। কেনেন কয়েক জোড়া লাভবার্ড ও কালো ঘুঘু। তিনি বলেন, বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি লালন-পালন করেন। ভিন্ন জাতের পাখি কিনতে প্রতি শুক্রবার এই বাজারে ছুটে আসেন। ব্যস্ততম সড়কে পাশে পাখির বাজার বসানোয় সড়কে যানজটের যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনি নারী–শিশুদের পাখি কিনতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পাখির বাজারটি বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় স্থানান্তর করা গেলে সবার জন্য সুবিধা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার অন্তত ৮০ জন ব্যবসায়ী এই বাজারে এক হাজারের বেশি পোষা পাখি বেচাবিক্রি করেন। রামু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসীম বরণ সেন বলেন, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কবুতর বাজার ভূমিকা রাখছে। কবুতর পালন লাভজনক ব্যবসা। তবে কবুতরের রানীক্ষেত, বসন্ত রোগ, হেপাটাইটিস রোগ, রক্ত আমাশয় হতে পারে। এ জন্য কবুতরের আবাসস্থল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে কবুতরকে আলাদা করে রাখতে হয়।