
‘২০১২ সালে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয় কোলন ক্যানসারে। এর দুই বছর পর বাবার মৃত্যুও হয় কোলন ক্যানসারে। এই দুটি মৃত্যু আমাকে নাড়া দিয়েছিল। কলেজে ওঠার পর সিদ্ধান্ত নিলাম চিকিৎসক হব। ক্যানসার নিয়ে কাজ করব। সেই স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগোলাম মাত্র। এখন আসল যুদ্ধ শুরু হবে।’
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ এ কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। এই প্রতিবেদককে জানালেন তাঁর পরিশ্রম ও স্বপ্নের কথা। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগে গড়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতেন। বাকি সময় পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতেন। ইংরেজি পড়তে গিয়ে বেগ পেতে হতো। ভয় ছিল, ইংরেজিতে নম্বর তুলতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত ভালো ফল করাই সবাই খুশি।
সানজিদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের গারাংগিয়া গ্রামে। তাঁরা তিন ভাই। মা খাইরুন্নেছা মোস্তারীসহ থাকেন চট্টগ্রাম নগরের মোহাম্মদপুর এলাকার ভাড়া বাসায়। তাঁর বাবা ছিলেন কলেজশিক্ষক। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় ভর্তি পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর সানজিদের ভাইয়েরা আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে মায়ের চোখ ভিজে গিয়েছিল। সানজিদ বলেন, ‘ফলাফল জানানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান আমার দুই ভাই। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।’
২০২২ সালে চট্টগ্রাম নগরের সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন সানজিদ। জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ২০২৪ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। সানজিদ বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস রয়েছে। পত্রিকায় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এরপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুটি কোচিংয়ে ভর্তি হই। নিয়মিত ক্লাস শুরু করি। নাওয়া–খাওয়া ভুলে শুধু পড়েছি।’
সব সময় জটিল বিষয় নিয়ে পড়তে পছন্দ করেন সানজিদ। জানালেন, কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। তবে ইংরেজি নিয়ে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। ভর্তি পরীক্ষার আগে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সানজিদের পরামর্শ হলো, কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো আয়ত্তে আনতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।