
বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরের পশুর নদে লাইটার জাহাজের ধাক্কায় ফ্লাইঅ্যাশ (সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত) বোঝাই একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে মোংলা ও পশুর নদের ত্রিমোহনা–সংলগ্ন চরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
দুর্ঘটনাকবলিত এমভি মিজান-১ নামের কার্গো জাহাজটি ৯১৪ টন ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে যাত্রা বিরতিকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান কার্গো জাহাজটির মাস্টার মো. বিল্লাল হোসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিল্লাল হোসেন জানান, ভারতে থেকে ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার আংটিহারা হয়ে তিনি পশুর নদে আসেন। রাতে চরের কাছে নোঙর করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) সকাল ছয়টা-সাড়ে ছয়টার দিকে এমভি কে আলম গুলশান-২ নামের একটি লাইটার জাহাজ ঘুরোতি যাইয়ে আমার ড্যাগ বরাবর (মাঝখানে) মাইরে দেয়।’
এমভি মিজান-১ জাহাজে ১০ জন স্টাফ ছিলেন। এর চালক শওকত শেখ বলেন, লাইটার জাহাজের ধাক্কায় তাঁদের জাহাজের পাশ ও নিচের অংশ ফেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পানি ঢুকে নদীতে ডুবে শুরু করে। তবে তাঁরা ১০ জনই সাঁতরে কূলে উঠতে সক্ষম হন।
দুর্ঘটনাটি বন্দরের পশুর চ্যানেলের বাইরে হওয়ায় মোংলা বন্দরে নৌযান চলাচলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মো. মাকরুজ্জামান বলেন, কার্গো জাহাজ এমভি মিজান-১ একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় পশুর নদের চরে ডুবে গেছে। তবে বন্দর চ্যানেল সুরক্ষিত রয়েছে এবং নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বন্দর চ্যানেল ঝুঁকিমুক্ত হলেও ফ্লাইঅ্যাশের কারণে জলজ পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশ কর্মীরা। মোংলা পশুর নদীর ওয়াটারকিপার নূর আলম বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ যদিও বলছে চ্যানেল সুরক্ষিত আছে। কিন্তু ফ্লাইঅ্যাশভর্তি কার্গোডুবির ফলে মাছসহ জলজ প্রাণীর ক্ষতি হবে। দূষণ ছড়িয়ে পড়বে নদীতে। পরিবেশের ক্ষতি হবে। মার্কারি, সিসা, পারদের কারণে নদী ও পানিদূষণ হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সিমেন্ট তৈরির ফ্লাইঅ্যাশে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের মিশ্রণ থাকে। ফলে এটি পানিতে মিশে গিয়ে পানির যে স্বাভাবিক গুণাগুণ, সেটিকে পরবর্তন করে ফেলবে। আর যেখানে কার্গো জাহাজটি ডুবেছে, সেখান থেকে যত দূর পর্যন্ত ফ্লাইঅ্যাশ দ্রবীভূত হবে, তত দূর পর্যন্ত জলজ প্রাণীর বিভিন্ন রকম শারীরবৃত্তীয় জটিলতা তৈরি হতে পারে। সুন্দরবন ও এর আশপাশের নদী-খালে এখন মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে। ফলে ডিম ও নতুন রেণুও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে এই দূষণ জোয়ার-ভাটার টানে মাটিতেও মিশে যাবে। ফলে উদ্ভিদরাজিও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বে।