সারা দেশে বিএনপির ডাকা অবরোধে যানবাহনে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। বাসচালকের সহকারীরা হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। আজ বুধবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে
সারা দেশে বিএনপির ডাকা অবরোধে যানবাহনে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। বাসচালকের সহকারীরা হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। আজ বুধবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে

খুলনায় অবরোধ

‘প্যাসেঞ্জার হোক বা না হোক, গাড়ি নিয়ে যাওয়াই লাগবে, না ছাড়লে আবার নামের লিস্ট হবে’

‘প্যাসেঞ্জার হোক বা না হোক, গাড়ি নিয়ে যাওয়াই লাগবে। অবরোধের সময় না ছাড়লে আবার নামের লিস্ট হবে। অমুক গাড়ি আর অমুক ড্রাইভার ট্রিপে যায়নি। ওই গাড়ির ট্রিপ বন্ধ করে দাও, সাইড করে রাখো। এরপর আর কী করার থাকে। ১০ জনে চালালি আমারও চালাতি হচ্ছে।’

পঞ্চম দফায় বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে আজ বুধবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছিলেন খুলনা-সাতক্ষীরা রুটের একজন চালক। তাঁর কথা বলার সময় ওই রুটের আরও চার-পাঁচজন চালক ও চালকের সহকারী আলাপে যোগ দেন।

তাঁদের একজন মো. আনিসুর রহমান। বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায়। ১৩ বছর ধরে বাসচালকের কাজে আছেন। তিনি বলেন, ‘অবরোধের সময় লোক হচ্ছে না। ট্রিপে না গেলে মালিক সমিতির লোকজন নাম–ঠিকানা লিখে রাখবেন, ইউনিয়নের নেতারা নাম–ঠিকানা লিখে রাখবেন। বাধ্যতামূলক যেতেই হবে। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। পরিবারের পাঁচ সদস্য। আয়ের লোক নেই। আমাদেরও আহামরি বেতন নয়, এক প্রকার দিনমজুরি করে খাই। আমরা যে কীভাবে চলছি, এ সংবাদ শোনার কেউ নেই। গতকাল ট্রিপে ভাগে ২৫০ টাকা হয়েছে। এ রকম রোজগার হলে ছেলেমেয়ের স্কুলের পয়সা দেব, বাজার করব নাকি খাব। একেক গাড়িতে তিনজন স্টাফ থাকেন। তাঁদের সবার সংসার আছে। সবাই খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছেন।’

অবরোধের পর থেকে গাড়িতে লোকজনের চলাচল কম। এতে আয়রোজগারও কমে গেছে জানিয়ে চালক শ্রী ধর্ম বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের প্যাসেঞ্জার হওয়া নিয়ে কথা। যাওয়া–আসায় যদি ১০ হাজার টাকা হয়, তেল লাগে ৪ হাজার টাকার। মহাজনকে ৪ হাজার টাকা। আর বাকি ২ হাজার চালক ও অন্য দুজন সহকারী ভাগ করে নিই। এখন যা লোক হচ্ছে, এতে মহাজনকেইবা কী দেব, তেল কী দিয়ে কিনব আর আমাদের সংসার চলবে কী দিয়ে? মাঝেমধ্যে গ্যাঁটের থেকে তেল কেনা লাগছে।’

একদিকে আয় কমছে অন্যদিকে অবরোধে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালানোতে বেশ বিরক্ত চালক বদরুজ্জামান। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্দেশ দিয়েছে যে গাড়ির ট্রিপে যাওয়াই লাগবে। পয়সা হোক বা না হোক। আমরা তো হুকুমের গোলাম। আমরা পরিস্থিতির শিকার। জোরপূর্বক আমাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে। গাড়ি চালাতেই হবে। যা পাচ্ছি, বাজার-বেসত করে খাওয়াই কঠিন। আমাদের কথা শোনার মতো, পাশে দাঁড়ানোর মতো লোক নেই। আবার ভয়ও তো আছে। আমাদের শরীরে বা অন্য কোনো ক্ষতি যদি হয়, সে ক্ষতিপূরণ কে দেবে? সরকার দেবে, না মালিক সমিতি দেবে? কেউ দেবে না। বেশি বিপদে পড়ে গেছি তাই আমরা।’

আজ বুধবার পঞ্চম দফায় বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে খুলনায় দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়িতে যাত্রী খরা আগের মতোই আছে। খুলনা থেকে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করছে।

খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার ঢাকাগামী পরিবহনের কাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে, তবে নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছে না। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের সোনাডাঙ্গা কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার মো. রাবাব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাভাবিক দিনে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে টুঙ্গিপাড়া পরিবহনের ২০টি গাড়ি যায়। আজ সেই সময়ে চারটি গাড়ি গেছে। লোকজন হচ্ছে না। দেখছেন না, কাউন্টার একবারে ফাঁকা।’

অবরোধের পর থেকে গাড়িতে লোকজনের চলাচল কম। এতে আয়রোজগারও কমে গেছে বলে জানিয়েছেন চালকেরা। আজ বুধবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে

খুলনা-পাইকগাছা রুটে আজ বুধবার ভোর থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ১১টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। একেক গাড়িতে দুই-তিনজন, কোনো কোনোটি আরও দু-একজন বেশি নিয়ে গেছে। ওই রুটের একজন সময় নিয়ন্ত্রক মো. সেলিম বলেন, ১২ মিনিট পরপর এখান থেকে পাইকগাছার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যায়। এখন ১৫ মিনিট পরপর ছাড়া লাগছে। অবরোধের অন্য দিনের মতোই অবস্থা আজ। যাত্রী নেই।

সোনাডাঙ্গা মোংলা রুটে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ছয়টি গাড়ি গেছে। ওই কাউন্টারের কর্মী মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, লোকজন কম। তবে অবরোধের প্রথম দিকের চেয়ে একটু বেশি আছে। আগের চেয়ে মানুষের চলাচল একটু স্বাভাবিক হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

সকালে খুলনা থেকে সব ট্রেনই সূচি অনুযায়ী ছেড়ে গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনার রকেট ঘাট থেকে নির্ধারিত একটি রুটে চলা দুটি লঞ্চও ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে।