
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের মার্কেটের দোকানঘরে চার দশকের বেশি সময় ধরে চলছে ফার্মেসির ব্যবসা। কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব দোকানকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন জেলার ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
আজ সোমবার সকাল ছয়টা থেকে জেলা শহরের সব ফার্মেসি বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন ব্যবসায়ীরা। শহরের প্রায় এক হাজার ফার্মেসি বন্ধ থাকায় ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের সামনে অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানাপ্রাচীর ও দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করে আসছেন। গতকালও শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে পরিত্যক্ত কাঠের বেঞ্চে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন এবং উচ্ছেদের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
ওই ঘটনার পর গতকাল রাতে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা জরুরি বৈঠক করে। বৈঠকে জেলা শহরের সব ফার্মেসি বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির নেতারা জানান, প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, তাঁদের দোকানগুলো বৈধভাবে স্থাপিত। ১৯৮৪ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পৃথক পৃথক চুক্তির ভিত্তিতে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি দোকানের বিপরীতে ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে তাঁরা চুক্তি করেন এবং নিয়মিত ভাড়াও দিয়ে আসছেন। তবে দুই মাস আগে থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী উচ্ছেদের অন্তত ছয় মাস আগে নোটিশ দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দাবি করেছেন।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ফখরুল ইসলাম ছিদ্দিকী দোকান উচ্ছেদ বন্ধে দুটি মামলা করেছেন। একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে, অন্যটি বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে। ১৯ অক্টোবর আদালত মামলার বিবাদীদের (কলেজ অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক-রাজস্ব, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার-ভূমি) ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বছরের ১৯ জানুয়ারি।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও তাঁদের দাবিতে অটল। তাঁরা ১৫, ২১, ২৩ ও ২৬ অক্টোবর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসক এবং কলেজ অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই উচ্ছেদ প্রয়োজন।
ফার্মেসি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের হারিয়া গ্রামের রুবেল মিয়া অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে শহরে আসেন। কিন্তু ফার্মেসি বন্ধ থাকায় ওষুধ না কিনেই বাড়ি ফিরে যান। শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদা ইসলাম বলেন, তাঁর এক বছর বয়সী শিশু তালহা জোবায়েরের ১০২ ডিগ্রি জ্বর। ওষুধ কিনতে এক ঘণ্টা ছোটাছুটি করেও সফল হননি তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল হান্নান খন্দকার বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অযৌক্তিক নয়। কলেজের সীমানাপ্রাচীর ও ফটক নির্মাণকাজের একটি বরাদ্দ আগেই ফেরত গেছে। এখন নতুন বরাদ্দ এসেছে। দোকানগুলো খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক ও একটি ফার্মেসির মালিক নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকান সরাতে আপত্তি নেই, তবে চুক্তি অনুযায়ী অন্তত ছয় মাস সময় দিতে হবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’ তিনি আরও বলেন, জেলা শহরের এক হাজার ফার্মেসি বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হলে পরবর্তী ধাপে পুরো জেলার ৯টি উপজেলাতেই ফার্মেসি বন্ধ থাকবে।’