
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে প্রতি ১ হাজার জনে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ৪৩ জনের বেশি। আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। যেখানে প্রতি হাজারে ৪৮ থেকে ৫০ জন ডায়াবেটিসে ভুগছেন। অর্থাৎ চট্টগ্রামে প্রতি ২০ জনের একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত। অথচ সারা দেশে এই হার ২৫ জনে একজন।
চট্টগ্রাম নগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাহবুবুল আলম। কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ বছর বয়সী মাহবুবুলের হাতের এক পাশে কেটে যায়। তবে তিনি খেয়াল করলেন, সামান্য ক্ষত শুকাতে সময় নিচ্ছে বেশি। সম্প্রতি হাঁটতে গেলে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন এবং তৃষ্ণা পাচ্ছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে জানা গেল, তিনি টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কথা হয় মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। ওষুধ নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। তিনি বলেন, গাড়ির ধাক্কায় ডান হাতের কিছু অংশ কেটে যায়। প্রায় এক মাসেও সেই ক্ষত সারছিল না। পরে আরও নানা সমস্যা দেখা দেয়। টেস্ট করালে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের কথা জানান চিকিৎসক। এর পর থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ, যাঁদের অধিকাংশই চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে প্রতি ১ হাজার জনে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ৪৩ জনের বেশি। আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। যেখানে প্রতি হাজারে ৪৮ থেকে ৫০ জন ডায়াবেটিসে ভুগছেন। অর্থাৎ চট্টগ্রামে প্রতি ২০ জনের একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত। অথচ সারা দেশে এই হার ২৫ জনে একজন।
‘হেলথ অ্যান্ড মরবিডিটি স্ট্যাটাস সার্ভে’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই জরিপে ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে আটটি বিভাগের ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৮৬ ব্যক্তির ৯০ দিনের স্বাস্থ্যতথ্য নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের ২৫ হাজার ৩৫১ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৯৬ জন পল্লি অঞ্চলের এবং ১২ হাজার ৪৫৫ জন শহরাঞ্চলের।
২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫। এই হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামের প্রায় ৪ লাখ ৪৯ হাজার মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। চিকিৎসক ও বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিসংখ্যানের এই হিসাব বাস্তবের কাছাকাছি। অনেকেই জানেন না তাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে। পরীক্ষাও করেন না।
চট্টগ্রামের প্রায় ৪ লাখ ৪৯ হাজার মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। চিকিৎসক ও বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিসংখ্যানের এই হিসাব বাস্তবের কাছাকাছি। অনেকেই জানেন না তাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে। পরীক্ষাও করেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তদের মধ্যে কর্মক্ষম ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি। কর্মজীবীদের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা, মানসিক চাপ, অনিয়মিত খাবার ও ঘুম এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এসব কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, ফাস্ট ফুড ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, চা বা কফির সঙ্গে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ কর্মক্ষম বয়সের অর্থাৎ ২০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এই বয়সসীমায় জনসংখ্যা ছিল ৫২ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৮ জন। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, এই বয়সসীমার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়েছেন বা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক সত্যজিৎ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ডায়াবেটিস, প্রাক্–ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিস আছে কিন্তু জানে না, এমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জীবনযাপনের অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ এই পরিস্থিতির জন্য বড় কারণ। সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে এই রোগ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।