যশোর শহরের নীল রতন ধর সড়কে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়
যশোর শহরের নীল রতন ধর সড়কে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়

ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন ও খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার দাবি

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন ও খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। এ জন্য আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ইউ-ড্রেন ৩৩ ফুটের জায়গায় কমপক্ষে ১০ ফুট বাড়িয়ে ৪৩ ফুট করা, বোরো আবাদে ভবদহ স্লুইসগেট খুলে দিয়ে পানিনিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দূর করা ও এখনই সম্ভাব্য বিলে টিআরএম (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট-জোয়ারাধার) চালু করার কথা বলেছে কমিটি।

এ ছাড়া নদগর্ভে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, কৃষিঋণ আদায় বন্ধ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও দিনমজুর গরিব কৃষকদের খাদ্য দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এসব দাবি মানা না হলে ২৪ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এরপরও দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে যশোর শহরের নীল রতন ধর সড়কে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগ্রাম কমিটির নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন এবং হুঁশিয়ারি দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব চৈতন্য কুমার পাল। তিনি বলেন, ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলে অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে। বোরো চাষ হওয়ার যে বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা নস্যাৎ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ অঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এর মধ্যে কিছু কাজ চলমান। আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ ও দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে খালের ইউ-ড্রেন অংশ ৩৩ ফুট চওড়া করায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা পানিনিষ্কাশনে সমস্যা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে আমডাঙ্গা খালের স্লুইসগেট প্রশস্ত করার। সে ক্ষেত্রে ইউ-ড্রেন কমপক্ষে আরও ১০ ফুট বাড়ানো দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতে বাড়াতে গেলে নতুন সংকট ও অর্থের অপচয় হবে। দ্রুত পানিনিষ্কাশন করে বোরো চাষ করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইসগেট থেকে ভাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া হরি নদ খননের জন্য আটটি খননযন্ত্র দেওয়া হয়। নদ খননের সঙ্গে সঙ্গে গেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চলেছেন। অপরিকল্পিত ও কাজের দীর্ঘসূত্রতা, গেট খুলে দেওয়ার কাজে টালবাহানা ও কূটযুক্তির মাধ্যমে ফসল ফলানোর জন্য উপদেষ্টা মহোদয়ের বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ করে দেওয়া হচ্ছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক অবস্থান নিয়েছে।

পানিসম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে যশোর সার্কিট হাউসে গণশুনানিতে তিনি ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে লুটেরা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে টিআরএম প্রকল্প বাতিল ও পাম্প চালু করে নদকে হত্যা করা হয়েছিল। বর্তমান দুর্ভোগের জন্য গণবিরোধী সেই সিদ্ধান্ত দায়ী। এখনো সেই চক্র সক্রিয় এবং তারা সরকারের কাছে কিছু স্বাক্ষরসহ আবেদন করেছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেই ভূত চেপে আছে। সে কারণেই সরকারি সিদ্ধান্ত বানচাল হতে চলেছে। এই মুহূর্তে ভবদহ স্লুইসগেট খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার অব্যাহত রাখলে ফসল ফলানো সম্ভব হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, পানিসম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে যশোর সার্কিট হাউসে গণশুনানিতে তিনি ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির (জাহিদ), আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, সদস্য জিল্লুর রহমান, অনিল বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।