ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যু হয়েছে ‘গভীর রাতে’

সাজিদ আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যু গত বুধবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। রোববার বিকেলে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সাজিদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তবে প্রতিবেদন দেওয়ার আগে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমাম ও চিকিৎসক রুমন রহমানের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদন রোববার বেলা তিনটার দিকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, রোববার সকাল নয়টার দিকে সাজিদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। সে সময় লাশের বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করে ধারণা পাওয়া গেছে, অন্তত ৩০ ঘণ্টা আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে তাঁর মৃত্যু বুধবার রাত দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে হতে পারে। তবে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে কি না বা অন্য কোনো কারণে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আল–কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন সাজিদ আবদুল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুর থেকে তাঁর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর পরিবার ও সহপাঠীরা বলছেন, সাজিদ হত্যার শিকার হয়েছেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর ক্যাম্পাস উত্তাল ছিল সাজিদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে। সহপাঠীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।

সাজিদ আবদুল্লাহর লাশের প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি সোমবার দুপুরের পর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসে আবারও বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকেল চারটার সময়ের বাস আটকে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়াসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।

পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফটকের তালা খুলে দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, ময়নাতদন্তের ভিসেরা প্রতিবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান, প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করা, সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) দেওয়া, ক্যাম্পাসের সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা প্রশাসনকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন। দাবি না মানলে বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।