নির্বাচনে অলৌকিক শক্তি কাজ করায় ভোটে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার-সদর একাংশ) আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মাদারীপুর-২ (রাজৈর-সদর একাংশ) আসনের আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী শাজাহান খান।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুস সোবহান বলেন, ‘নির্বাচনে নৌকার ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকেরা। তারা কালকিনি পৌরসভাসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নৌকার পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। বিশেষ করে কালকিনি পৌরসভার ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি কেন্দ্র তারা দখলে নিয়ে ভোটে সূক্ষ্ম কারচুপি করেছে। এই ১২টা কেন্দ্রে আমাদের নৌকার কোনো এজেন্ট ছিল না। এ কারণে ঈগল একচেটিয়া ওখানে ভোট কেটে নিয়ে গেল। অন্য কয়েকটি ইউনিয়নেরও তারা একচেটিয়া ভোট নিয়ে গেল।’
নৌকার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ তুলে আবদুস সোবহান বলেন, ‘এটা নৌকার আসন (মাদারীপুর-৩)। আমরা চেয়েছিলাম, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক। ভোটাররা কেন্দ্র আসুক। তাহলে আমরা আশাবাদী ছিলাম, বিপুল ভোটে আমরা জিতব। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। হিন্দু ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দেয় নাই। তাদের বাধা দিছে। আবার দেখা গেছে, যে হিন্দু পুরুষ ভোটাররা কেন্দ্রে আসছে, মহিলারা বাসায় রয়েছে। এই সুযোগে পুরো ঘর লুটপাট করেছে, ভাঙচুর করেছ, আগুন দিয়েছে। যার প্রমাণ কেন্দুয়া এলাকায়। সেখানে ৩৮টি বাড়িতে নৌকায় ভোট দেওয়ায় তাদের বাড়িঘর লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়েছে।’
আবদুস সোবহান বলেন, ‘ভোটের দিন রাতে ও পরের দিন যাঁরা নৌকায় ভোট দিয়েছেন, এমন প্রায় ৩০০টি পরিবারের বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গরিব মানুষের গরু, ছাগল লুট করে নেওয়া হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ একাত্তরের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। নির্বাচনের পরবর্তী সময় এখন যা সহিংসতা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে হার-জিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বোমাবাজি করে, মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে, লুটপাট করে তারা কী বোঝাতে চাচ্ছে? আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই এবং আমি এ সংঘাত থেকে মুক্তি চাই।’
নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ করে আবদুস সোবহান বলেন, ‘নৌকা ভোটে হারেনি। সূক্ষ্ম কারচুপি ও ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা হেরেছি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটায় আমরা হেরেছি। যার প্রমাণ আমি কমিশনে লিখিত আকারে পাঠিয়েছি।’ প্রশাসনকে নিজের লোক দাবি করে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বলেন, ‘ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনও সব আমাদের লোক, এই সরকারের লোক। এর বাইরে একটি শক্তি কাজ করল। একজন ম্যাজিস্ট্রেট নৌকার এজেন্টকে ধরে নিয়ে গেল। সে এত শক্তি কোথা থেকে পেল? সে তো ডিসি দ্বারা পরিচালিত না। এসব কারণে আমরা ভোটে হারিনি, সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা হেরেছি। এখানে ঈগল জিতেছে, নৌকার পরাজয় হয়েছে। তবে সেটা ভোটের মাধ্যমে নয়। কারচুপি করে ঈগল জিতেছে।’
অলৌকিক শক্তি কে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুস সোবহান বলেন, ‘আমি রানিং এমপি। নির্বাচনের মাঠে ছিলাম। আমি ফাইন্ডিং করেছি, এখানে একটি অলৌকিক শক্তি কাজ করেছে। এই শক্তির পেছনে কারা কাজ করছে, তা ফাইন্ড আউট করতে আমি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তারা খুঁজে বের করার কাজ করছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পুরোটা নয়, পৌরসভার ১২টি কেন্দ্র দেখেন। এসব কেন্দ্রে নৌকা ১৯, ২০, ১৬ ভোট পেয়েছে। এত কম কীভাবে সম্ভব? এটা নৌকার জন্য অগ্রহণযোগ্য একটি ফিগার।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, মাদারীপুরে বহু নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পরে এমন সহিংসতা কখনো হয়নি। এখানে কিছু লোক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এসব লোকদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যেকোনো মূল্যেই এ সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আবদুস সোবহানের বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে অপশক্তির পেছনে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা যাবে। যদি আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী জড়িত থাকে, দল বিচার করবে। অন্য কেউ জড়িত থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ, মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক সরদার মো. লোকমান হোসেন, মাদারীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে ৩৪ হাজার ৬৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম (ঈগল)। বিজয়ী তাহমিনা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।