
নড়াইল সদর উপজেলার সহায় সম্বলহীন হরিচাঁদ বিশ্বাসের সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর আগে বিয়ে হয় শ্রবণপ্রতিবন্ধী নারী ঝর্ণা বিশ্বাসের। সড়কের পাশে সরকারি জমিতে একটি ঝুপড়িতে সংসার পাতেন নবদম্পতি। দিনমজুর স্বামীর সংসারের অভাব ঘোঁচাতে ঘরের সামনে ডিম, শিঙাড়া, পরোটা বিক্রি শুরু করেন ঝর্ণা। শুরু হয় প্রতিবন্ধী ঝর্ণার জীবনসংগ্রাম।
হরিচাঁদ বিশ্বাস ও ঝর্ণা বিশ্বাস দম্পতি নড়াইল সদর উপজেলা শেখহাটি ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামে বসবাস করেন। নড়াইল-তুলারামপুর-শেখহাটি আঞ্চলিক সড়কের মালিয়াট মোড়ে ঝর্ণার ছোট্ট দোকান। সেখানে জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে দোকানটি চালাচ্ছেন ৫০ বছর বয়সী ঝর্ণা বিশ্বাস।
শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুরঞ্জন গুপ্ত বলেন, মালিয়াট বাজারে শিঙাড়া-ঝালমুড়ির ব্যবসা করে পরিবার পরিচালনা করেন প্রতিবন্ধী নারী ঝর্ণা। তাঁকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সরকারি জমিতে বসবাস করেন। যদি সরকারি ঘর দেওয়ার বা অন্য কোনো সুযোগ আসে, তাহলে তা দেওয়া হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে মালিয়াট মোড়ে গিয়ে কাঠ দিয়ে বানানো দোকানঘরটি দেখা যায়। ঘরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩ থেকে ৪ ফুট হবে। ভেতরে বসে কড়াইয়ে ডিম ভাজছিলেন ঝর্ণা। পাশে একটি কাচবন্দী পাত্রে রাখা হয়েছে শিঙাড়া। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের কেউ কিনছেন শিঙাড়া, কেউ নিচ্ছেন ডিম ভাজা। ক্রেতাদের সামলাতে ব্যস্ত ঝর্ণা। এরই মধ্যে দোকানে আসেন ঝর্ণার স্বামী হরিচাঁদ।
ক্রেতাদের ভিড় কমলে কথা হয় হরিচাঁদ বিশ্বাস-ঝর্ণা বিশ্বাস দম্পতির সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, বিয়ের পরপরই সংসার সচ্ছলতা আনতে দোকান দেন ঝর্ণা। আর হরিচাঁদ খেত-খামারে কাজ করেন। বিয়ের দীর্ঘ বছর পার হলে কোনো সন্তান আসেনি তাঁদের সংসারে। পরে ঝর্ণার অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন হরিচাঁদ। সেই সংসারে এক ছেলে হয়। দুজন থেকে সংসার হয় চারজন। বর্তমানে সরকারি জমিতে ছোট একটি দোচালা ঘরে তাঁদের বসবাস। সংসারে সদস্য সংখ্যা বাড়ায় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দিনমজুর হরিচাঁদ ও স্ত্রী ঝর্ণার আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঝর্ণা বিশ্বাস বলেন, তাঁদের জায়গা-জমি নেই। সরকারি জমিতে থাকেন। একসময় এই দোকানেই বসবাস করতেন। এখান পাশের সরকারি জায়গায় বসবাস করেন। আর দোকানটা চালান। খুব বেশি আয়রোজগার নেই। সবকিছুর দাম বেড়েছে। এভাবে সংসার চলে না। তারপরও বাঁচার তাগিদে দোকানদারি করতে হয়।
মানষিরে তো ঘর-দুয়োর দেচ্ছে সরকার। আমাগে একখান দিলি একটু সুবিধা হয়হরিচাঁদ বিশ্বাস, ঝর্ণা বিশ্বাসের স্বামী
হরিচাঁদ বিশ্বাস বলেন, স্ত্রীকে দোকানের কাজে সহায়তা করেন। আর তিনি মাঠেঘাটে কাজ করেন। কোনো মতো তাঁদের সংসার চলে। কষ্ট করেই দিন যায়। তিনি আরও বলেন ‘মানষিরে তো ঘর-দুয়োর দেচ্ছে সরকার। আমাগে একখান দিলি একটু সুবিধা হয়।’
সহায়-সম্বলহীন পরিবারটির দুরবস্থার কথা এলাকার প্রায় সবারই জানা। স্থানীয় বাসিন্দা শংকার বিশ্বাস বলেন, ‘এনারা খুবই গরিব মানুষ। জায়গা-জমি নাই, থাকেও খুব কষ্টে। সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা একটু সুখে থাকতে পারত।’