
এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল শুরু হয় গত বছরের আগস্টে। চারটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও গাড়ি চলছে না।
চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশে গাড়ি চলাচল শুরুর এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ের ১০টি র্যাম্পের ১টিও এখন পর্যন্ত চালু করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জমি অধিগ্রহণ, মামলাসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ের পাঁচ বছর পার হলেও র্যাম্পগুলোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে মূল এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও এর পরিপূর্ণ সুফল পাচ্ছেন না চট্টগ্রামের মানুষ।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল ২০১৭ সালের আগস্টে। ওই সময় তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। এরপর সময় ও ব্যয় দুটি বাড়ানো হয়। দুই দফা ব্যয় বৃদ্ধির পর এখন খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ৩১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তিন দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে ২০২৬-এর জুন পর্যন্ত।
২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করা হয়েছিল। তবে মূল অংশে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয় গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে। আনুষ্ঠানিকভাবে টোল পরিশোধের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল করছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে।
গাড়িচালক ও যাত্রীরা জানান, এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পগুলো চালু হলে মূল সড়কের ওপর গাড়ির চাপ কিছুটা হলেও কমত। তখন নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাম্পের মাধ্যমে মূল এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা যেত। এখন সে সুযোগ নেই। বর্তমানে শুধু নগরের পতেঙ্গা এবং লালখান বাজার ও মুরাদপুর থেকে ওঠার সুযোগ রয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৫টি র্যাম্প নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিডিএতে চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্য পদে পরিবর্তন আসে। এরপর ৫টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়।
১০টির মধ্যে ২টির নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। এগুলো হচ্ছে নগরের আগ্রাবাদে ডেবার পাড়ে পতেঙ্গামুখী ওঠার র্যাম্প এবং জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র্যাম্প।
এই বিষয়ে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ডেবার পাড় এলাকায় র্যাম্প নির্মাণের জন্য রেলওয়ের ২২ শতক জায়গা প্রয়োজন। এখনো রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই জমি অধিগ্রহণ করার অনুমতি পাওয়া যায়নি। আগামী বছরের জুনের আগেই নির্মাণকাজ শেষ হবে।
বর্তমানে নগরের চট্টগ্রাম ইপিজেডের সামনে ওঠানামার দুটি, কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে ওঠার একটি এবং জিইসি মোড়ে একটি ওঠার র্যাম্পের নির্মাণকাজ চলছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্মাণকাজ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে শেষের দুটি র্যাম্পের নির্মাণকাজ নিয়ে জটিলতা রয়েছে বলে জানান সিডিএর প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে র্যাম্পের নির্মাণকাজ করতে কিছু ভবন ভাঙতে হবে। আর জিইসি মোড়ের র্যাম্পের শুরুর অংশ নিয়ে মামলা রয়েছে। ওয়াসা মোড়ে পানির পাইপ স্থানান্তরে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ওয়াসা ও রেলওয়ের সহযোগিতা পাওয়া গেলে র্যাম্পগুলোর কাজ অনেক দ্রুত শেষ করা যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড় পর্যন্ত পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কিছু কিছু অংশে গার্ডারও বসানো হয়েছে। আর চট্টগ্রাম ইপিজেডের সামনে র্যাম্পের নির্মাণকাজের কারণে নিচের সড়ক ভেঙে বেহাল হয়ে পড়েছে।
সিডিএর প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ১০টি র্যাম্পের মধ্যে ৪টির কাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নগরের নিমতলা মোড়ে ওঠানামার দুটি র্যাম্প, টাইগারপাসে আমবাগানমুখী নামার একটি র্যাম্প এবং ফকিরহাটে নামার একটি র্যাম্প। তবে এগুলো দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়নি।
সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, নিমতলা মোড়ের দুটি র্যাম্পের নির্মাণকাজ শেষ হলেও টোল বুথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যে টোল বুথ স্থাপনের কাজ শেষ হবে। এরপর গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। টাইগারপাসে আমবাগানমুখী র্যাম্প উন্মুক্ত করার আগে তার সামনের অংশ প্রশস্ত করতে হবে।