ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী গত শুক্রবার ভোরে কয়েকটি স্পিডবোটে করে ৭৮ জনকে সুন্দরবনের গহিনে মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী গত শুক্রবার ভোরে কয়েকটি স্পিডবোটে করে ৭৮ জনকে সুন্দরবনের গহিনে মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়

সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৩ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা–সংলগ্ন পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) রেখে যাওয়া ৭৩ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া আটজনকেও স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কোস্টগার্ড মংলা পঞ্চিমাঞ্চলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিফ্রিংয়ের পর দুপুর ১২টার দিকে ৭৩ জনকে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার অসুস্থ দুজনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কোস্টগার্ডের ব্রিফিংয়ের পর সুন্দরবনে রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অসুস্থ দুজনকে তাঁদের স্বজনদের কাছে আগেই হস্তান্তর করা হয়েছিল। বাকি তিন ভারতীয়কে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ অসুস্থ হয়ে পড়া আটজনকেও তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার ভোরে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারবাড়িয়া চরে কয়েকটি নৌযানে ৭৮ জনকে রেখে যায় বিএসএফ। পরে বন বিভাগের কর্মীরা তাঁদের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে নিয়ে রাখেন। এরপর কোস্টগার্ড তাঁদের উদ্ধার করে শ্যামনগর থানায় এনে রাখে। যাচাই করে দেখা যায়, পুশ ইন করা ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশ। অন্য তিনজন ভারতীয় নাগরিক।

কোস্টগার্ড পশ্চিমাঞ্চলের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, গত ৯ মে ভোরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি ও তিনজন ভারতীয়কে জোরপূর্বক পুশইন করে। তাঁদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি বস্তিতে বসবাস করে আসছিলেন এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাঁদের বাসা থেকে আটক করে। পরে ৯ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গোপনে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারাড়ি চরে রেখে যায়। চর থেকে ওই ব্যক্তিরা মান্দারবাড়িয়া বন বিভাগের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। বন বিভাগ বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানালে ১০ মে তাঁদের উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধসামগ্রী সরবরাহ করে।

রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে আবরার হাসান বলেন, ভারতীয় পুলিশ তাঁদের বস্তিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। তাঁদেরসহ পরিবারের সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন করে। তারপর চোখ বেঁধে একটি সামরিক বিমানে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আরেকটি সামরিক বিমানে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে। পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে ৯ মে ভোরে সুন্দরবনের একটি জায়গায় রেখে যায়। জাহাজে তাঁদের শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ করে। এমনকি তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেনি। এখন পর্যন্ত তাঁদের স্ত্রী–সন্তানদের সঠিক অবস্থান তাঁরা জানেন না। তিনি বলেন, উদ্ধার ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ১১ মে সকালে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

৭৮ জনের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় নাগরিক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭৫ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।